ছবির লড়াইয়ে কে কাকে পিছনে ফেলবে, সেটা তো পরের হিসেব। প্রথম চিন্তাটা হল, দু’টো ছবির মধ্যে দর্শক ভাগ হয়ে যাবে কি না।
একটা সময় বোধহয় সে জন্যই রোশন-পরিবার চেষ্টা করেছিল দু’টো ছবির রিলিজ যাতে আলাদা তারিখে হয়। শেষরক্ষা হয়নি অবশ্য। আগামী ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে বলিউডের দুই সুপারস্টারের দু’টো ছবি। একদিকে ‘রইস’ নিয়ে শাহরুখ খান, যিনি বলিউডের একমেবদ্বিতীয়ম বাদশা। আরেকদিকে ‘কাবিল’এর হাত ধরে হৃতিক রোশন, আপাতত যাঁর ছবির চেয়ে ব্যক্তিগত জীবনটাই বেশি চর্চায়। এই বাজারে একটা হিট তাঁর নিতান্তই দরকার। ছবির লড়াইয়ে কে কাকে পিছনে ফেলবে, সেটা তো পরের হিসেব।
প্রথম চিন্তাটা হল, দু’টো ছবির মধ্যে দর্শক ভাগ হয়ে যাবে কি না। একটা সময় বোধহয় সে জন্যই রোশন-পরিবার চেষ্টা করেছিল দু’টো ছবির রিলিজ যাতে আলাদা তারিখে হয়। শেষরক্ষা হয়নি অবশ্য। হৃতিক যদিও সাফ জানিয়েছেন, ছবির তারিখে ঠোকাঠুকি লাগলেও শাহরুখের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না। কিন্তু তেমনটা কি সত্যি হয়? একই দিনে দু’টো বড় ছবি মুক্তি পেলে তার আঁচ কি কলাকুশলীর উপরেও গিয়ে পড়ে না? বলিউড কিন্তু উল্টো প্রমাণই দিয়েছে বারবার!
দীপিকা পাড়ুকোন-শাহরুখ খান প্রথম ছবিতে দীপিকা শাহরুখের নায়িকা হয়েছিলেন। শাহরুখকে নিজের মেন্টর মনে করেন তিনি। আর সেই শাহরুখের একটা কথাতেই কি না ফোঁস করে উঠলেন! কারণ আর কিছুই নয়, ছবিতে-ছবিতে ঠোকাঠুকি। শাহরুখ অভিনীত ‘দিলওয়ালে’ এবং দীপিকার ‘বাজিরাও মস্তানি’ মুক্তি পেয়েছিল একই দিনে। ছবি মুক্তির আগে কোনও তরফে অসৌজন্য প্রকাশ পায়নি। বরং ‘বলিউড একটি বৃহৎ পরিবার, দু’টো ছবিই ভাল ব্যবসা করুক’ গোছের হাবভাবই দেখা যাচ্ছিল। গোল বাধালেন শাহরুখ।
বলে বসলেন, ‘‘আমাদের ছবিটা পারিবারিক এবং হ্যাপি-গো-লাকি ধরনের। ওঁদের ছবি নিশ এবং ঐতিহাসিক। দু’টো ছবিই দর্শক আলাদা আলাদা সময়ে হল’এ গিয়ে দেখবেন।’’ এই মন্তব্যটাই পছন্দ হয়নি দীপিকার। সাফ বলেছিলেন, ‘‘আমি জানি না শাহরুখ ছবিটাকে নিশ বলে কী বোঝাতে চেয়েছেন।’’ তাঁর মতে, দু’টো ছবির জঁর আলাদা হলেও ‘বাজিরাও মস্তানি’ আদৌ নিশ নয়।
যে দীপিকা মিষ্টভাষী বলেই পরিচিত, তাঁর হঠাৎ প্রিয় মানুষেরই একটা কথায় এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানোটা আশ্চর্য বইকী! সঞ্জয় লীলা বনশালী-ফারহা খান এই ক্ল্যাশের ইতিহাসটা পুরনো। কিন্তু রীতিমতো সাড়া জাগানো! সঞ্জয়ের ‘সাওয়রিয়া’ এবং ফারহার ‘ওম শান্তি ওম’ একই দিনে মুক্তি পেয়েছিল। দু’টো ছবি নিয়েই যথেষ্ট চর্চা চলেছিল বলিউড এবং দর্শকমহলে। কিন্তু ব্যাপারটাকে ব্যক্তিগত ঝামেলার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ফারহা। সঞ্জয়ের মা’কে নিয়েও ঠাট্টা-তামাশা করেছিলেন এমনকী! সঞ্জয় রীতিমতো চটে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমার মা ফারহাকে এত পছন্দ করেন। তাঁকে এর মধ্যে টেনে আনা কেন? আমি কোনওদিন কারও বাবা-মায়ের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করব না, যতই আমাকে উস্কানো হোক!’’ লড়াইয়ে শেষমেশ ‘ওম শান্তি ওম’ই জিতেছিল। কিন্তু পরে ফারহা স্বীকার করেছিলেন, ‘সাওয়রিয়া’র সঙ্গে তাঁর ছবি রিলিজ করাটা সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি।
‘‘তা না হলে হয়তো ‘ওম শান্তি ওম’ আরেকটু ভাল ব্যবসা করত,’’ বলেছিলেন তিনি। অজয় দেবগণ-কর্ণ জোহর গত দিওয়ালিতে মুক্তি পেয়েছিল অজয়ের ‘শিবায়’ এবং কর্ণের ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’। তার আগেই বোমাটি ফাটান অজয়। জানিয়েছিলেন, কর্ণ জোহর নাকি কামাল আর খানকে ২৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘শিবায়’এর নিন্দেমন্দ করার জন্য। প্রমাণ হিসেবে তাঁর ছবির সহ-প্রযোজক কুমার মঙ্গত এবং কামালের ফোনালাপের একটা অডিও ক্লিপও সামনে এনে দাবি করেছিলেন, গোটা বিষয়টার তদন্ত হোক।
কামাল আবার সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে দাবি করেছিলেন, কর্ণ তাঁকে কোনও টাকা দেননি। উল্টে অজয়ের তরফ থেকেই নাকি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব এসেছিল, ‘অ্যায় দিল...’এর নিন্দে করতে বলে। বিষয়টা নিয়ে কর্ণ জানিয়েছিলেন, তাঁর আত্মসম্মানবোধ, মর্যাদাবোধ এবং শিক্ষাদীক্ষা এমনই যে এই ব্যাপারে মন্তব্য করতে তাঁর রুচিতে বাধছে। অজয় এবং কর্ণের দারুণ বন্ধুত্বের কথা কখনওই শোনা যায়নি। তবে এই ঝামেলার ফলে কাজলের সঙ্গেও তিক্ততা বেড়ে যায় কর্ণের।
এখন যে তাঁরা ‘হাই-হ্যালো’ ছাড়া কোনও কথাই বলেন না, তা কর্ণ তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত বইয়ে (অ্যান আনস্যুটেবল বয়) স্পষ্ট লিখেছেন। অক্ষয় কুমার-হৃতিক রোশন একজনের ‘রুস্তম’। আরেকজনের ‘মহেঞ্জো দড়ো’। একই দিনে। তবে ছবি মুক্তি পাওয়ার আগে দুই তারকার ভাবের অন্ত ছিল না। অক্ষয় তো ‘ওবেলা’কে বলেই দিয়েছিলেন, ‘‘যতটা লড়াইয়ের কথা বলা হয়, ততটা আসলে নেই। আমরা একে অপরের রক্ত খেতে চাই, মুখোমুখি হলেই ঝাঁপিয়ে পড়ব, এমন নয়।’’
হৃতিকও টুইট করেছিলেন, ‘মহেঞ্জো দড়ো’ এবং ‘রুস্তম’এর আসন্ন মুক্তির কথা জানিয়ে। লিখেছিলেন, ‘দোস্তি কি হ্যায় তো নিভানি পড়েগি’। কিন্তু বন্ধুর সাফল্যে অভিনন্দন জানাতে এত দেরি করে ফেললেন? ঠিকই বটে, লাভের ভাঁড়ার ভর্তি হয়েছিল ‘রুস্তম’এর। ‘মহেঞ্জো দড়ো’ সুবিধেই করতে পারেনি। কিন্তু ছবি-মুক্তির আগে যে হৃতিক ‘রুস্তম’ নিয়ে অত উৎসাহ দেখাচ্ছিলেন, ছবির সাফল্য নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরেও বেশ কিছুদিন তিনি অক্ষয়কে অভিনন্দন জানাননি। অক্ষয় সংবাদমাধ্যমকে সে কথা জানানোর পরে বোধহয় টনক নড়েছিল তাঁর! তাই অক্ষয়য়েরই একটা টুইটের উত্তরে কনগ্র্যাচুলেট করেছিলেন হৃিতক।
আদিত্য চোপড়া-কাজল আদিত্য চোপড়ার পরিচালনায় ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’ কাজলের কেরিয়ারের অন্যতম মাইলফলক। আদিত্যের সঙ্গে বন্ধুত্বও তখন থেকেই পোক্ত। সেই বন্ধুত্বেই চিড় ধরল ছবির ক্ল্যাশের কারণে! তা-ও কাজলের নিজের ছবি নয়, তাঁর স্বামী অজয় দেবগণের ‘সন অফ সর্দার’ নিয়েই ঝামেলা।
যা মুক্তি পেয়েছিল চোপড়াদের ‘যব তক হ্যায় জান’এর সঙ্গে। অজয় ‘কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া’য় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, যে ‘যশ রাজ ফিল্মস’ নিজেদের প্রতিপত্তিকে কাজে লাগিয়ে ‘যব তক...’এর জন্য বেশি স্ক্রিন আদায় করে নিচ্ছে এগ্জিবিটরদের থেকে। ফলে কাজলের সঙ্গে চোপড়াদের সম্পর্কে প্রভাব পড়েছিল। কাজল নিজেই জানিয়েছিলেন সে কথা। তবে আশা প্রকাশ করেছিলেন, যে এমন ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.