সংবাদ সম্মেলন তখন শেষ। ফিরে যাচ্ছেন মাশরাফী বিন মোর্তুজা। সংবাদকর্মীদের একজন বললেন, এই অভিজ্ঞতাই হয়ত আপনার বাকি ছিল, দেশেরই একজন ক্রিকেটার তেড়ে যাচ্ছেন আপনার দিকে। মাশরাফী হাসলেন, ছেলেরা সব স্মার্ট হয়ে যাচ্ছে, ভালোই…।
বলার অপেক্ষা রাখে না, হাসিমুখে বললেও মাশরাফী কথাটা বলছিলেন খানিকটা আক্ষেপ থেকেই। তার জন্য নিশ্চয়ই অভিজ্ঞতাটি সুখকর কিছু ছিল না।
আজ বুধবার চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে রংপুর রাইডার্সের রান তাড়ার সেটি ১৭তম ওভার। শুভাশিস দারুণ এক ইয়র্কার করলেন, ঠেকালেন ব্যাটসম্যান মাশরাফী। নিজের বলে ফিল্ডিং করেই বল মাশরাফীর দিকে ছুড়ে মারতে উদ্যত হলেন শুভাশিস। মাশরাফী হাত ইশারায় বললেন, ‘যা’।
আর যায় কোথায়, শুভাশিস জ্বলে উঠলেন তেলেবেগুনে। তেড়ে গেলেন মাশরাফীর দিকে। মাশরাফীর অবাক দৃষ্টি। শুভাশিস তবু থামার পাত্র নন। সতীর্থরা এসে যখন টেনে নিচ্ছেন, শুভাশিস তখনও হাত-পা ছুড়ে গর্জে যাচ্ছেন। মাশরাফী স্রেফ তাকিয়ে একদৃষ্টে!
মাঠের ক্রিকেটে এ রকম ঘটনা বিরল নয়। তবে যেভাবে খুব বেশি কারণ ছাড়া খেপে গেলেন শুভাশিস, সেটি বিস্ময়করই। সবচেয়ে বড় বিস্ময় ঘটনা যার সঙ্গে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফী যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার উচ্চতায় আছেন, সেখানে দেশেরই আরেক ক্রিকেটারের এমন আচরণ অবাক করেছে সম্ভবত সবাইকেই।
সংবাদ সম্মেলনে অবধারিতভাবেই শুরুতে এই প্রশ্ন। মাশরাফী অল্প কথায় এড়িয়ে যেতে চাইলেন। ঘটনা যা ছিল, তা সিরিয়াস কিছু নয়। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এ রকম হয়। সিরিয়াস কিছু নয়।
এরপরও এই প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন থেমে থাকে না। মাশরাফী মুচকি হাসতে জবাব দিলেন। তাতে মিশে থাকল স্বভাবসুলভ বিনয়।
আমি…আমি মনে করি, আই শুড সে সরি টু হিম। আমারই সরি বলা উচিত। ক্রিকেটেরই অংশ। হয়ে থাকে এমন। ওর জায়গা থেকে হয়ত ঠিকই আছে। সে জিততে চায়, আমিও জিততে চাই।
যেহেতু সে আমার ছোট, আমার আরেকটু মাথা ঠাণ্ডা রাখলে ভালো হতো। সিরিয়াস কিছু হয়নি অবশ্যই। আমি জানি না, ওর কি করা উচিত ছিল। কিন্তু সিনিয়র হিসেবে আমার আরেকটু শান্ত থাকলে ভালো হতো।”
বিস্ময়কর ও তার জন্য বিব্রতকর ঘটনাটি যেভাবে সামলালেন, যেভাবে উত্তর দিলেন, তাতে মাশরাফী আরেকবার বুঝিয়ে দিলেন, কেন মানুষ হিসেবে সবাই তাকে সম্মান করে এতটা।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.