কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই


বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক, শক্তিমান অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই (ইন্নালিল্লাহি....রাজিউন)। আজ সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।


মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী রাজলক্ষ্মী, ছেলে বাপ্পারাজ, স¤্রাটসহ পাঁচ সন্তান, আত্মীয়-স্বজন, অগণিত ভক্ত-শুভাকাঙ্খী রেখে যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৫। ইউনাইটেড হাসপাতালের মিডিয়া পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান শুভ বাসসকে জানান, আজ বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে নায়করাজ রাজ্জাককে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎকরা তাকে পরীক্ষা করতে থাকেন। তার শ্বাস-প্রশ্বাস,পালস ও রক্তচলাচল পাওয়া যাচ্ছিল না। ৬টা ১৩ মিনিটে চিকিৎকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যুকালে তার দুইপুত্র নায়ক বাপ্পারাজ ও নায়ক সম্রাট হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। তার মৃত্যুর সংবাদ রাজধানীতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে চলচ্চিত্রাঙ্গণসহ সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বাসসকে বলেন, নায়ক রাজ্জাকের মৃত্যুতে দেশ-বিদেশে গভীর শোক ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বাইরে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রাঙ্গনও শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে। এ মহান অভিনেতার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। অভিনেতা রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের (বর্তমান ভারত) কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।

কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্বরসতি পূজা চলাকালীন মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্য তার শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে বেছে নেন নায়ক অর্থাৎ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা নাটক ‘বিদ্রোহী’তে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নায়করাজের অভিনয় জীবন শুরু। ১৯৬৪ সালে রাজ্জাক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। চলচ্চিত্রকার আবদুল জব্বার খানের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে ‘ তের নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ ছবিতে ছোট একটি চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। এর পর ‘কার বউ’, ডাক বাবুতেও অভিনয় করেন।

চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে তার প্রথম ছবি জহির রায়হান পরিচালিত ‘ বেহুলা ’। সে থেকে তিনি ৩ শতাধিক বাংলা ও কয়েকটি উর্দু চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। পরিচালনা করেন ১৬টি চলচ্চিত্র। নায়ক রাজ্জাকের অভিনয় করা উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে, বেহুলা,আগুন নিয়ে খেলা,দর্পচূর্ণ,এতুটুকু আশা, নীল আকাশের নিচে, কখগঘঙ, জীবন থেকে নেয়া, নাচের পুতুল, অশ্রু দিয়ে লেখা,ওরা ১১ জন, অবুঝ মন, রংবাজ, আলোর মিছিল, শুভ দা, অভিযান, যোগাযোগ, অন্ধ বিশ্বাস, টাকা আনা পাই, ছন্দ হারিয়ে গেল, মানুষের মন, অতিথি, যোগ বিয়োগ, মধু মিলন, যে আগুনে পুড়ি, দুই পয়সার আলতা, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, দ্বীপ নেভে নাই, পীচ ঢালা পথ, দুই ভাই, আবির্ভাব, বন্ধু, বাঁশরী, আশার আলো, কে তুমি, মতিমহল, আনোয়ারা, নাত বউ, অবাক পৃথিবী, কি যে করি, গুন্ডা, অনন্ত প্রেম, অশিক্ষিত, ছুটির ঘন্টা, মহানগর, বড় ভাল লোক ছিল, রাজলক্ষ্মী, শ্রীকান্ত, স্বরলিপি, বাদী থেকে বেগম, বাবা কেন চাকর।

চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সাতবার চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার, চলচ্চিত্রের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন এই শক্তিমান অভিনেতা।
Share on Google Plus

About Admin

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.