একটা নোট হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি ছোটবেলায় একবার ৫০ টাকার । সেই দুঃখে সারা দিন খেতে পর্যন্ত পারেনি বছর পনেরোর ছেলেটা। তাই রাস্তা থেকে ৭০০ ক্যারেট হীরার একটি প্যাকটে কুড়িয়ে পাওয়ার পর সেই কথাই মনে পড়ে গিয়েছিল।
তাই প্যাকেটটি যার, তাকেই ফিরিয়ে দিল সে। সততার জন্য বিশাল উপাধ্যায় নামে ওই কিশোরকে নগদ ৩০ হাজার টাকা আর্থিক পুরস্কার দিয়েছেন হীরার মালিক মানসুখ সাভালিয়া।
গুজরাটের সুরাট শহরের মাহিধাপুরা এলাকায় থাকে বিশাল। ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন পাড়াতেই বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিল সে। সেসময় স্থানীয় একটি পার্কিং লটে বল কুড়োতে গিয়ে একটি প্যাকেট নজরে পড়ে বিশালের। প্যাকেটে ৭০০ ক্যারেট হীরা ছিল।
বিশাল উপাধ্যায় বলেছে, ‘আমি প্যাকেটটা নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। কাউকে কিছু বলিনি। প্যাকেটটা বাড়িতেই লুকিয়ে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম, একদিন নিশ্চয়ই প্যাকেটের মালিকের খোঁজ পাব। তখন প্যাকেটটা তাঁকে ফিরিয়ে দেব। তিন দিন পরে, প্যাকেট খোঁজে ফের ওই এলাকায় আসেন প্যাকেটটির মালিক। আমি ওকে বলি, প্যাকেটটি আমার কাছে আছে।’
বিশালদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। বাবা একটি বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী। মা বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করেন। বিশালের দাদা বেসরকারি সংস্থার সামান্য চাকুরে।
তিনজনের রোজগারে কোনওমতে টেনেটুনে সংসারটা চলে যায়। তাই হীরার প্যাকেটটি ফেরত না দিলে তো সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরতে পারত। সেকথা কী একবার মনে হয়নি বিশালের?
বছর পনেরোর কিশোর জানিয়েছে, ‘একবার মায়ের দেওয়া ৫০ টাকা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম। সারাদিন খেতে পারিনি। হীরার প্যাকেটটা পাওয়ার পর বারবারই মনে হচ্ছিল, এই প্যাকেট যাঁর, তিনি কতটা কষ্ট পাচ্ছেন।’
বিশালের সততায় আপ্লুত হীরার প্যাকেটটি মালিক মানসুখ সাভালিয়া। ওই কিশোরকে নগদ ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছেন তিনি।
মানসুখ সাভালিয়া বলেন, ‘হিরের প্যাকেটটি ফিরিয়ে দেওয়ার ছেলেটির কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। প্যাকেটটা না পেলে, বাড়ি বিক্রি করে আমাকে ঋণ শোধ করতে হত। ও আমাকে এবং আমার পরিবারকে বাঁচিয়েছে।’ বিশাল উপাধ্যায়কে ১১ হাজার নগদ পুরস্কার দিয়েছে সুরাট ডায়মন্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাবু গুজরাটিও।
পড়াশোনা করে অনেক বড় হতে চায় বিশাল। বাবা-মাকে সুখী করতে চায়। তাই বিশাল ঠিক করেছে, সততার পুরস্কার হিসেবে যে টাকা সে পেয়েছে, তা পড়াশোনার জন্যই খরচ করবে।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.