শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা শব্দটি মুখেই আনলেন না সুষমা
জীবন বাঁচাতে মায়ন্মার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়টি সমাধান করতে মায়ান্মারকে চাপ দেওয়ার জন্য ভারতকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ঢাকা সফরে আসা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে এই অনুরোধ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।” তিনি অবশ্য তার বক্তব্যে ঘুণাক্ষরেও রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি। মিয়ানমারে নিধনযজ্ঞের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এই মানুষদের বোঝাতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার না করে সুষমা স্বরাজ রাখাইন রাজ্যের ‘বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিবর্গ’ বলেছেন।
নতুন কারে আসা সাড়ে ছয় লক্ষ রোহিঙ্গা ছাড়াও আগে আসা মিলিয়ে নয় লক্ষের ওপর রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের জবাবে সরাসরি তিনি কিছু না বলে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে গিয়ে তার সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। এদিকে এর আগে রোববার বিকেলে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে অংশ নেন তিনি। ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় ওই বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে তার আশ্বাস পেয়ে আমরা খুশি। রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য প্রদানের জন্য ভারতকে ধন্যবাদ।’ মাহমুদ আলী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে ফেরাসহ বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার অনুরোধ করেছি।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এ বিষয়ে তাঁর বিবৃতিতেও রোহিঙ্গা শব্দ উল্লেখ না করে বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত লোকজনের মাতৃভূমিতে ফেরার মধ্যেই সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। আমাদের দৃষ্টিতে রাখাইন রাজ্যের একমাত্র স্থায়ী সমাধান হচ্ছে দ্রুত সেখানে আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, যা সেখানকার সব জনগোষ্ঠীর জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে আমাদেরও সমর্থন রয়েছে।’ দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
রোববার দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে তাঁকে বহনকারী ভারতীয় বায়ু সেনার বিশেষ উড়ান। রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সুষমা স্বরাজ। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তাঁর সৌজন্যে সোনারগাঁও হোটেলে নৈশভোজের আয়োজন করেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এরপর এ ছাড়া রাত সাড়ে আটটায় সুষমা স্বরাজ বিরোধী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন।
এদিকে সফরের শেষ দিনে সোমবার ঢাকার বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সুষমা স্বরাজ। সেখানে ভারতের আর্থিক সহযোগিতায় ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। ২০১৪ সালের মে মাসে বিজেপি ক্ষমতায় আসার এক মাস পর ভারতের বিদেশমন্ত্রী হিসেবে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন।
কংগ্রেস-আওয়ামী লীগ সম্পর্কের বিশেষ মাত্রা আর ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের কারণে তাঁর সেই সফরটি নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে। বিশেষ করে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে পরের পাঁচ বছর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ‘বিশেষ মাত্রা’য় কোনো খাদ সৃষ্টি হবে কি না, তা নিয়ে সরকারি মহলে কিছুটা হলেও সংশয় ছিল। আর বিজেপি ক্ষমতায় আসায় উৎসাহিত হয়েছিল বিএনপি। তবে ঢাকা সফরের সময় সুষমা স্বরাজ বলে গেছেন, কংগ্রেস শাসনামলে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কে যে অগ্রগতি হয়েছে, সেটি ধরেই সম্পর্কটা এগিয়ে নেবে বিজেপি। বাস্তবিকই তাই ঘটছে। ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাছে ব্রাত্য হয়ে উঠছে কংগ্রেস, বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.