সর্বপ্রথম যার জন্য জান্নাত খুলে দেয়া হবে


আমাদের আগে অনেক নবী ও রাসূল এসেছেন। তাদের সংখ্যা অগণিত। একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন তাদের সংখ্যা। নবী ও রাসুলের উম্মতগণ আলাদা। যেমন : মুসা (আ.) এর অনুসারীদেরকে আহলে কিতাব, হযরত ঈসা আ. এর বিশেষ সহযোগীদেরকে হাওয়ারী, সর্বশেষ আমাদের নবী সা.)এর উম্মতকে মুসলমান বলা হয়।


অনেকের মনে জিজ্ঞাসা থাকে, এত নবীদের মধ্যে জান্নাত সর্বপ্রথম কার জন্য খুলে দেওয়া হবে ? সর্বপ্রথম কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেন? এসম্পর্কিত কিছু হাদীস উল্লেখ করা হলো : আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামতের দিনে নবীগণের মধ্যে আমার অনুসারীর সংখ্যাই হবে সবচেয়ে বেশি এবং আমিই সবার আগে জান্নাতের কড়া নাড়ব।” (মুসলিম )

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “কিয়ামত দিবসে আমি জান্নাতের গেইটে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইব। তখন খাজাঞ্চি বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তরে বলব, মুহাম্মদ। খাজাঞ্চি বলবেন: ‘আপনার জন্যই দরজা খুলতে আমি আদিষ্ট হয়েছি। আপনার পূর্বে অন্য কারোর জন্য দরজা খুলব না’।” (মুসলিম)

  জান্নাতে সর্বপ্রথম প্রবেশকারী মানুষ :
 হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযাদকৃত গোলাম সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম; ইতঃমধ্যে ইয়াহূদীদের এক ব্যক্তি এসে বলল: আসসলামু ‘আলাইকুম ইয়া মুহাম্মদ! এরপর আমি তাকে এমন এক ধাক্কা মারলাম যে, সে প্রায় পড়েই গিয়েছিল! তখন সে বলল: তুমি আমাকে ধাক্কা মারলে কেন? জবাবে আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ ! বলতে পার না? ইয়াহূদী বলল: আমরা তাঁকে তাঁর পরিবার পরিজন যে নাম রেখেছে, সে নামেই ডাকি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার নাম মুহাম্মদ, আমার পরিবারের লোকই আমার এই নাম রেখেছে। তারপর ইয়াহূদী বলল: আমি আপনাকে (কয়েকটি কথা) জিজ্ঞাসা করতে এসেছি; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তোমার কী লাভ হবে, যদি আমি কিছু বলি? সে বলল: আমি আমার কান পেতে শুনব; এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে যে লাঠিটি ছিল তা দিয়ে মাটিতে আঁকা-ঝোকা করলেন; তারপর বললেন: জিজ্ঞাসা কর, ইয়াহূদী বলল: যেদিন এক যমীন ও আসমান পাল্টে গিয়ে অন্য যমীন ও আসমানে পরিণত হবে (অর্থাৎ কিয়ামত হবে) সেদিন লোকজন কোথায় থাকবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম: তারা সেদিন পুলসিরাতের কাছে অন্ধকারে থাকবে। সে বলল: কে সর্ব প্রথম (তা পার হবার) অনুমতি লাভ করবে? তিনি বললেন: দরিদ্র মুহাজিরগণ।

ইয়াহূদী বলল: জান্নাতে যখন তারা প্রবেশ করবে, তখন তাদের তোহফা (উপহার) কী হবে? তিনি বললেন: মাছের কলিজার টুকরা। সে বলল: এরপর তাদের সকালের নাস্তা কী হবে? তিনি বললেন: তাদের জন্য জান্নাতে ষাঁড় যবেহ করা হবে, যা জান্নাতের আশে পাশে চরে বেড়াত। সে বলল: এরপর তাদের পানীয় কী হবে? তিনি বললেন: সেখানকার একটি ঝর্ণার পানি, যার নাম ‘সালসাবিল’। সে বলল: আপনি ঠিক বলেছেন।” (মুসলিম)

হাদীসে আরো এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “দরিদ্র মুসলিমগণ ধনী মুসলিমগণের অর্ধদিন পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর সেই অর্ধদিনের পরিমাণ হবে (দুনিয়ার হিসাবে) পাঁচশত বছর।” (তিরমিযী) হাদীসে আরো এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমাকে প্রদর্শন করানো হয়েছে ঐ তিন ব্যক্তিকে, যারা প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে: শহীদ, সচ্চরিত্রবান পবিত্র ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তি, যে সুন্দরভাবে আল্লাহর ইবাদত করেছে ও তার মনিবদের (কর্তৃপক্ষের) কল্যাণ কামনা করেছে।” (তিরমিযী )

  জান্নাতবাসীগণ কর্তৃক জান্নাতে প্রবেশের বিবরণ

এসর্ম্পকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার উম্মত থেকে সত্তর হাজার লোক অথবা সাত লক্ষ লোক একে অপরের হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বর্ণনাকারী আবূ হাযেমের নিশ্চিত জানা নেই যে, তিনি উভয় সংখ্যার মধ্যে কোনটি বলেছেন) তাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকলেই একসাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর তাদের চেহারাগুলো পূর্ণিমার চাঁদের আলোর ন্যায় উজ্জ্বল থাকবে।”(বুখারি,মুসলিম) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: “সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের মুখমÐল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল।

তারপর যে দল তাদের অনুগামী হবে, তাদের মুখমÐল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার মত। তারা না করবে পেশাব, আর না করবে পায়খানা। তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক থেকে শ্লেষ্মাও বের হবে না। তাদের চিরণী হবে স্বর্ণের তৈরি। তাদের ঘাম হবে মিশকের ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের ছাইদানি বা আগরদানি হবে সুগন্ধযুক্ত চন্দন কাঠের। ডাগড় চক্ষু বিশিষ্টা হূরগণ হবে তাদের স্ত্রী। তাদের সকলের দেহের গঠন হবে একই রকম। তারা সকলেই তাদের আদি পিতা আদম আ. এর আকৃতিতে হবে। উচ্চতায় তাদের দেহের দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত।” (বুখারি, মুসলিম)

 অপর এক বর্ণনায় এসেছে: “আর তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দু’জন স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্যের ফলে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাঁড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোন মতভেদ থাকবে না; পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সকলের অন্তর এক অন্তরের মত থাকবে। তারা সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠে রত থাকবে।” (বুখারি ,মুসলিম)

 মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “জান্নাতবাসীগণ পশমহীন শরীর, দাড়ি-গোঁফবিহীন মুখ, সুরমা দেয়া চোখের মত কাজল কালো চোখ এবং ত্রিশ বা তেত্রিশ বছর বয়সের যুবক অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।”(তিরমিযী)

 মিকদাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করবে মায়ের পেট থেকে মৃত ভুমিষ্ট হয়ে, অথবা বৃদ্ধ বয়সে, আর মানুষ তো এতদোভয়ের মাঝেই হয়ে থাকে, তাদেরকেই পুনরায় জীবিত করা হবে তেত্রিশ বছরের যুবক হিসেবে। অতঃপর তাদের মধ্যে যে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে, সে হবে পরিমাপে আদম আ. এর মত, চেহারা-ছবিতে ইউসূফ আ. এর মত এবং অন্তরের দিক থেকে আইয়ূব আ. এর মত। আর সে যদি জাহান্নামের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে তার পুনরুত্থান হবে পাহাড়ের মত বিশাল আকারের শরীর নিয়ে।” (তাবারানি, বায়হাকি)
Share on Google Plus

About Admin

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.