খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে ভাঙচুর : এই শাহাদাত আমি নই :চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি অডিওতে শুনা যাচ্ছে, ‘ম্যাডামের গাড়িতে যেন ঢিল না পড়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে অডিওতে কথোপকথনে শাহাদাত হোসেন নামক একজনের যে কণ্ঠস্বর প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এই অডিও ভাইরাল হয়েছে।
কে এই শাহাদাত তা নিয়ে রহস্যের যেন শেষ নেই।
দেশের প্রধান দুইটি দল এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন এবং ফেনী বিএনপির এক নেতার মধ্যে মোবাইলে এ কথোপকথন হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিক সম্মেলনে ওই কণ্ঠস্বর নিজের নয় দাবি করে বলেন, ‘আমি ওই অডিওর শাহাদাত নই। এ কণ্ঠস্বর ফেনীর ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদাত হোসেন ওরফে সাকার।’
শনিবার কক্সবাজার সফরে রওনা হওয়ার পথে ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হয়। হামলাকারীরা বহরে থাকা সংবাদকর্মীদের একাধিক গাড়ির কাচ ভেঙে দেয়।
তবে অক্ষত থাকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও অন্য নেতাদের বহনকারী সব গাড়ি। এই ঘটনার জন্য বিএনপি দায়ী করেছে আওয়ামী লীগকে। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, তারা নয়, বিএনপির লোকেরাই পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের মধ্যেই রবিবার রাত ২টার দিকে ‘দৈনিক খবর ২৪ ডট কম’ নামক একটি অনলাইন সংবাদপত্রে একটি অডিও টেপ প্রকাশ করা হয়, যাতে খালেদার গাড়িবহরে হামলার নির্দেশ দিতে শোনা যায়।
গতকাল রাজধানীতে পৃথক দুইটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ অডিওর কথোপকথন প্রকাশ করেন।
অডিওর ওই রেকর্ডে শোনা যায়, শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের গাড়িতে যেন ঢিল না পড়ে’। তখন অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘না লিডার ওদের সব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, ম্যাডামের গাড়িতে কোনো ঢিল পড়বে না। ওদের বুঝিয়ে দিয়েছি শুধু সাংবাদিকদের ওপর হামলা করতে হবে।’ শাহাদাত হোসেন তখন বলেন, ‘কিছু ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়েছো?’।
জবাবে ফেনী বিএনপির ওই নেতা বলেন ‘হ্যাঁ, ওরা স্থানীয় কয়েকজন, ওদের টাকা পয়সা দিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনো সমস্যা হবে না, ম্যাডামের গাড়িতে কোনো ঢিল পড়বে না।’
আওয়ামী লীগের দুই নেতার বক্তব্যের পর গতকাল দুপুরেই চট্টগ্রাম মহনগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, অডিও টেপের ওই কণ্ঠটি ফেনীর ধর্মপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদাত হোসেন সাকার।
তিনি বলেন, ফেনীতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা নিয়ে একটি অনলাইন পত্রিকা তার ছবি দিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে। এটি ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও কারসাজিপূর্ণ। ফেনীর হামলায় জড়িতদের নাম ও ছবি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও টিভিতে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, এ হামলা পরিচালনার মূল দায়িত্বে ছিলেন শর্শদী ইউপির চেয়ারম্যান জানে আলম ভুঁইয়া ও ধর্মপুর ইউপির শাহাদাত হোসেন সাকা। চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সাকার নামের জায়গায় তার নাম দিয়ে এই অপপ্রচার চালানো হয়েছে। একটি মহল পরিকল্পিতভাবে এই অপপ্রচার করছে।
৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কাউকে মারা তো দূরের কথা, চড়-থাপ্পড়ের নির্দেশও দেননি বলে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন চট্টগ্রাম বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় রাজনীতির সুষ্ঠু ধারায় বিশ্বাসী এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করে এসেছি।
আমার কণ্ঠ দেশবাসী চেনে ও জানে। বিভিন্ন মিডিয়ার টকশোতে আমি সব সময় কথা বলে আসছি। দৈনিক খবর ২৪ ডট কম অনলাইন পত্রিকা আমার ছবি ও কণ্ঠ বলে যে অডিও প্রকাশ করেছে, আমি এই শাহাদাত নই। আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি।
ওই সংবাদে যে অডিও ও ভিডিও টেপ প্রকাশ করা হয়েছে, ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে শাস্তির জোর দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ওই আলাপের শব্দ, কণ্ঠ, একসেন্ট কোনোটাই মিল নেই। যেখানে ঘটনা সেখানকার (নোয়াখালীর) আঞ্চলিক টান রয়েছে কথায়।’
ওই অনলাইনের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘অসুস্থ রাজনীতি ও সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদাত হোসেন সাকার কণ্ঠকে বিকৃত করে বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে’।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ওই অডিওতে হামলার নির্দেশদাতার কণ্ঠটি চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেনের বলে দাবি করে বলেন, ‘বিএনপি সব সময় চক্রান্ত করে, এবারও তাই করেছে।’ তিনি বলেন, ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ফেনী বিএনপির এক নেতার কথোপকথনের মাধ্যমেই প্রমাণ হয় ওই হামলা সাজানো।
এই রকম নোংরা রাজনীতি বিএনপি করে, নিজেরা ঘটনা ঘটিয়ে অন্যের ওপর দোষ চাপানো বিএনপির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’
দুই দল পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার প্রেক্ষিতে কোন শাহাদাত তা নিয়ে জনমনে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় কণ্ঠস্বরের শাহাদাত কে? এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতির সুস্থ ধারা বজায় রাখার স্বার্থে ওই শাহাদাতের মুখোশ উন্মোচন হওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদাতের অস্বীকার
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের অভিযোগের বিষয়ে ফেনীর ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদাত হোসেন ওরফে সাকার বলেন, ওই অডিওর কণ্ঠটিও তারও নয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করার সঙ্গে তিনি সেদিন ঘটনাস্থলে শর্শদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি রিয়েলের উপস্থিতির ব্যাখ্যা দেন। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘হামলার পর যানজট হলে তা সরানোর জন্য সেখানে রিয়েলসহ ছাত্রলীগের ছেলেরা গিয়েছিল।’
এই বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা রিয়েলের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হামলার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও নোয়াখালীর সাবেক এমপি জয়নুল আবদিন ফারুকের ‘লোকজন’কে দায়ী করেন। প্রসঙ্গত, হামলাকারী যুবকদের মধ্যে স্থানীয় শর্শদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি রিয়েলের ছবি গণমাধ্যমে আসে।
ছাত্রদল ও যুবদল এ ঘটনা ঘটিয়ে : কাদের
এদিকে বিএনপি হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করলেও না নাকচ করে ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, হামলার ঘটনাটি বিএনপির সাজানো। রবিবার রাজধানীতে দুটি অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার কাছে খবর আছে, ছাত্রদল ও যুবদল এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদল ও যুবদলকে দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়ে ছাত্রলীগের উপর, যুবলীগের উপর দোষ চাপানোর এটি একটা মতলব, সেই মতলবটা এখন পরিষ্কার।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সরকারি দল। দেশ শান্তিতে চলছে। কী প্রয়োজন বেগম জিয়াকে বাধা দিয়ে আমাদের নিজেদের ক্ষতি করা? এটা তো সরকার ও আমাদের রুলিং পার্টির ক্ষতি। আমরা কেন আমাদের ক্ষতি ডেকে আনব?’
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.