আইএসের ‘খিলাফত’ সমাপ্তি ঘোষণা ইরাকের


ইরাকের মসুলে ৮৫০ বছরের পুরোনো গ্র্যান্ড নুরি মসজিদ গতকাল বৃহস্পতিবার পুনর্দখলে নেওয়ার দাবি করেছে সরকারি সেনারা।


ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদিকে জনসমক্ষে মাত্র একবারই এ মসজিদে দেখা গিয়েছিল। সেই সময় তিনি তাঁর প্রতি মুসলিমদের আনুগত্য প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ইরাক ও সিরিয়ায় এই জঙ্গিগোষ্ঠীর ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণার তিন বছর পর সম্প্রতি ইরাকি বাহিনী ঐতিহাসিক এ মসজিদের কাছাকাছি অবস্থান নিতে সক্ষম হয়। এই অবস্থায় গত সপ্তাহে আইএস মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয় বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়। এ ঘটনার পর গতকাল ইরাকি বাহিনী এটি পুনর্দখলের ঘোষণা দিল।

সেই সঙ্গে ইরাক সরকার দেশটিতে আইএসের ‘খিলাফত’ অবসানের কথা ঘোষণা করেছে। ইরাকের যৌথ অপারেশন কমান্ড এক বিবৃতিতে বলেছে, সন্ত্রাস-দমন সার্ভিসের সদস্যরা নুরি মসজিদ ও আল-হাদবার (মিনার) নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এর আগে ইরাকি বিশেষ বাহিনীর কমান্ডার বলেছিলেন, কার্যত এ মসজিদ পুনর্দখলে আসেনি। তখন এর ব্যাখ্যায় অপারেশন কমান্ড বলেছিল, তাঁর এ কথার অর্থ হলো, ইরাকি সেনারা ওই এলাকা ঘিরে ফেলেছে এবং লক্ষ্য অর্জনে অগ্রসর হচ্ছে। এই মসজিদ এবং এর বিখ্যাত হেলানো মিনার মসুলের অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন বলে বিবেচিত এবং ইরাকে আইএসের শাসনের ইতিহাসের সঙ্গে এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ইরাকের সরকারি টেলিভিশন ইরাকিয়া টিভি গতকাল এক ব্যানার প্রদর্শন করেছে।

তাতে ‘পৌরাণিক রাষ্ট্রের পতন’-এর কথা ঘোষণা করা হয়; আইএসের ভাষায় যেটা ‘খিলাফত রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালে ইরাকের দ্বিতীয় বড় শহর মসুল দখলে নেওয়ার পর এক শুক্রবার এই নুরি মসজিদে জুমার খুতবা দেন আইএস নেতা বাগদাদি। এর তিন বছর পর এখন পর্যন্ত বাগদাদির ভাগ্য ও তাঁর ঠিক-ঠিকানা অজানা রয়ে গেছে। ইতিমধ্যে আইএস তার নিয়ন্ত্রণে থাকা অনেক এলাকার দখল হারিয়েছে। এই শহরে অগ্রসরমাণ ইরাকি বাহিনীকে প্রতিহত করার চেষ্টায় ক্রমেই বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল আইএস।

এর ধারাবাহিকতায় ২১ জুন তারা ঐতিহাসিক মসজিদটি এবং এর মিনার উড়িয়ে দেয় বলে জানা যায়। ইরাকি সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আইএসবিরোধী জোটের কর্মকর্তারা বলেছেন, মসজিদটি ধ্বংসের ঘটনা মসুলে জঙ্গিগোষ্ঠীটির আসন্ন পতনেরই এক লক্ষণ। আর ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি একে আইসের ‘পরাজয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা’ বলে আখ্যায়িত করেন। নুরি মসজিদের ১২ শতকের ওই হেলানো মিনার ইরাকের অত্যন্ত সুপরিচিত স্থাপনার অন্যতম। একে দেশটির পিসা টাওয়ারের সঙ্গে তুলনা করা হতো।

মিনারসহ মসজিদটি ধ্বংসের ঘটনা দেশটির অধিবাসীদের ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে। গ্র্যান্ড নুরি মসজিদ দখল করে নেওয়ার ঘটনাকে ইরাকি বাহিনীর বিজয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মসুল শহরটি পুনর্দখলে নেওয়ার জন্য আট মাসের বেশি সময় ধরে তারা লড়াই চালাচ্ছিল।
Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.