চলতি বছরের ১০ এপ্রিল একটি বেসরকারি সংবাদ চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্পটলাইটে উঠে আসেন শাকিব পত্নী অপু বিশ্বাস। মাঝে কিছুদিন বিরতির পরে এবার ব্যক্তিজীবনের কিছু না বলা কথাগুলো ভক্ত-শ্রোতাদের শোনাতে সেলিব্রেটি শো ‘সেন্স অব হিউমার’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই উঠে আসে শাকিব খানকে ঘিরে বুবলির সর্ম্পকের গুঞ্জনের বিষয়টি। এ প্রসঙ্গে অপু বিশ্বাস বলেন, “এই মেয়েটিকে নিয়ে কথাবার্তা বলা, এটাই আমার কাছে মনে হচ্ছে অদ্ভুত একটা প্রশ্ন। কারণ শাকিব খান একজন হিরো। সে সব হিরোইনদের সঙ্গে কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। এর আগেও শাকিব খান অনেক হিরোইনের সঙ্গে কাজ করেছেন। অনেক গ্ল্যামারাস হিরোইন।
আমি এক বাক্য বলবো- মীম, পরীমনি, মাহি, শখ, বিন্দু।” কেরিয়ারের শুরু থেকেই শাকিব বলয়ে আবদ্ধ ছিলেন অপু বিশ্বাস। যদিও বিভিন্ন হিরোইনের সঙ্গে জুটিবেঁধে অভিনয় করেছেন শাকিব খান। কিন্তু ভবিষ্যতে শাকিব যদি অপুর সঙ্গে জুটিবেঁধে কাজ করতে আর আগ্রহী না হন এবং অপুকে সংসারমুখী হতে বলেন, সে ক্ষেত্রে নিজের অবস্থানও পরিস্কার করলেন শাকিব পত্নী অপু বিশ্বাস। বলেন, “একজন আর্টিস্ট নিজেকে গড়ে তোলে। এটাই একজন আর্টিস্টের ধর্ম। কে আমার সঙ্গে কাজ করবে আর কে কাজ করবে না- এটা উত্তরের মধ্যে পড়েও না, এমনকি আমি এটাকে কোনো প্রশ্নও মনে করি না। কারণ এটা একটা আর্টিস্টের যোগ্যতা। সে তাকে গড়ে তুলবে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কাজ করার জন্য। আর একজন আর্টিস্টের কেরিয়ার সেই আর্টিস্টই ভালো জানে।”
তিনি আরও বলেন, “শাকিব যদি সুপারস্টার হয়ে থাকে আমি শাকিবের সঙ্গে সেইভাবেই কাজ করেছি। আমারও একটা পজিশন বা কেরিয়ার দাঁড়িয়েছে। তাই সেখান থেকে আমি সিদ্ধান্ত নেবো কোনটা ভালো আর কোনটা ভালো না।” এরপরেই অনুষ্ঠানে উঠে আসে শাকিব খানের সঙ্গে অপুর প্রেমের বিষয়টি। সেই গল্পও ভক্ত-দর্শকদের কাছে শোনালেন অপু বিশ্বাস। বলেন, “আমি যখন স্কুলে ছিলাম তখন ছেলেদের কীভাবে বলতে (প্রেমের প্রস্তাব) হয় জানা ছিলো না। আর শাকিব তো আগে থেকেই প্লেবয়, ক্লেভার টাইপের। এমন অনেক মেয়েকেই বলেছে। ইনফ্যাক্ট অনেক মেয়েদের বলে, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমাকে বিয়ে করবে? প্লিজ দেখো, আমি কিন্তু প্রথমবারের মত তোমার সঙ্গে কথা বলছি। কাউকেই বলিনি।’- এই ডায়ালগ তো ওর (শাকিবের) কমন।” তিনি আরও বলেন, “তো এই রকম একটা ডায়ালগ আমাকেও দিয়েছিলো, যেটা আমার কাছে আনকমন ছিলো। কাজেই সেটাই মনে হয়, হতে পারে প্রেমের শুরুটা। এই রকম কথা তো সে সবাইকে বলে। সবাই এড়িয়ে গেলো। কিন্তু আমি ফাঁদে পড়ে গেলাম। ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে। এখন কাদঁতেছি।”
শাকিব-অপু দম্পতির একমাত্র সন্তান আব্রাহাম খান জয়। ছেলের নামকরণ প্রসঙ্গে বললেন জয়ের মা অপু। বলেন, “আমার ছেলের নাম জয় রাখার কারণ একটা ছিলো। আমি তো অনেক যুদ্ধ করে বাচ্চাটাকে নিয়েছি। ওই জায়গাটাতে আমার মা বারবার আমাকে বলছিলো, এত যুদ্ধের পরে যখন ও হয়েছে ও জয় করেই হয়েছে। তাই ওর নাম জয়।”
তিনি আরও বললেন, “আমার ছেলের ‘জয়’ নামের কোন অর্থ নেই। এখানে অর্থ একটাই আমি অনেক যুদ্ধ করে আমার বাচ্চাটাকে নিয়েছি। অবশেষে আমার বাচ্চাকে জন্ম দিতে পেরেছি এবং অবশেষে আমি আমার অবস্থানে আসতে পেরেছি। ভালোবাসার একটা কাতারে গিয়েছি। আমার ছেলে জয় করেছে।”
অনুষ্ঠানে শাকিব খানের সঙ্গে সিনেপাড়ার বিভিন্ন নায়িকাদের সঙ্গে দুষ্টুমির প্রসঙ্গেও বেশ খোলামেলা ভাবে কথা বলেন ঢালিউলের আলোচিত এই শাকিব পত্নী। যেখানে কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে শাকিবকে ঘিরে আলোচিত নায়িকা শবনম বুবলির নাম। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে শাকিবের সর্ম্পক বন্ধুতের। আমার সামনে ও ফোন করে বলতো, ‘হ্যা বেবি…বিশ্বাস করো।
আমি ভাবতে পারছিনা আমি তোমাকে নিয়ে এত ভাবছি কেন? শোন, আমার কাছে মনে হয় যে, আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি!’ আমার মনে হয় এইরকম একটা কথা বুবলিকেও বলেছে।” তিনি আরও বলেন, “বুবলি হয়ত ভাবছে, ও মাই গড আমাকে রিয়েলি লাভ করেছে। শাকিব বলেছে, ‘আমার তো কোনো মেয়ের সঙ্গে সর্ম্পক নেই। ও অপু… জাস্ট ফরগেট ইট।
অপু কে? অপুকে তো চিনি না’- এই কথা হয়ত বলেছে। সে (বুবলি) হয়ত বিশ্বাস করেছে।” সেক্ষেত্রে উপস্থাপকের পাল্টা প্রশ্নে ছিলো, তাহলে বুবলি শাকিব খানকে ভালোবেসে ফেলেছে কি না? এমন প্রশ্নে অপুতো হেসেই খুন। বলেন, “মনে হয়, পাগলামী করে তো। কারণ সে তো আমার স্বামী। এমন দুষ্টুমী আমার সামনে অনেক করেছে। এরকম আমি নাম বলতে চাই না। হাজারো হিরোইন আছে। আমি জানি আমার স্বামী একজন হিরো। একজন হিরোর অনেক ধরণের স্বাধীনতা থাকার দরকার।”
নায়িকা হিসেবে অপু বিশ্বাসেরও স্বাধীনতা থাকা দরকার। সেই বিষয়টি ভবিষ্যতে অপু বিশ্বাসও কি অনুসরণ করবেন? প্রশ্নে অপুর উত্তর, “হিরোইন হলেও আমরা একটা মেয়ের জাতি। আমাদের সম্মান, মান, ভদ্রতা, একাগ্রতা- এটা কিন্তু আমাদেরই দায়িত্ব। সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে। আট বছর ধরে শাকিব আমার সঙ্গে সংসার করেছে। আমি কখনো ওকে মানসিকভাবে আঘাত করিনি। কারণ শাকিব আমার চেয়ে বারো-তেরো বছর আগে ফিল্মে এসেছে। কাজেই একদিক থেকে সে যেমন আমার স্বামী, আরেক দিক থেকে সে আমার সিনিয়র আর্টিস্ট।”
তিনি আরো বলেন, “আমিও একটা জগৎ তৈরি করেছি আমার স্বামীর হাত ধরেই। আমার স্বামী অবশ্যই আমাকে ভালো বোঝে। এবং তাকে ধরেই যখন আমার কাজে আসা, আমার ভালোমন্দটাও সে জানে। কিন্তু আমি বলবো আমরা মেয়ে জাতি, আমাদের নম্রতা, ভদ্রতা, আমাদের সবকিছু আমাদের সামাজিক অবস্থানে প্রভাব ফেলে। আমাদের সন্তান ও পরিবারেও প্রভাব ফেলে। যদিও আমরা বলি- ছেলে ও মেয়ে এক কাতারে, আমরা কেউ ছোট কিংবা বড় না। কিন্তু অবশ্যই আমরা ছোট-বড়।
আমি মনে করি ছেলেরা স্বামী, তারা বাবা, তারা কর্তা, তাদের সেই অবস্থানটা একটু হলেও মেয়ের থেকে উর্ধ্বে। তাই তারা যেটাই করুক না কেন, আমরা মেয়েরা সেটা করতে পারি না।” অন্যদিকে দীর্ঘদিনের অভিনয় কেরিয়ারে অপুর পছন্দের নায়িকা কে এমন প্রসঙ্গেও অপুর মুখে আবারো উঠে আসে বুবলির প্রসঙ্গ। “বুবলি তো আমার ছেলের কারণে ওর (জয়) বাবার কাছে গেলো। ‘বসগিরি’ সিনেমা আমার ছিলো। ও (বুবলি) কিন্তু একটা ভালো সেটআপ করেছে।
‘বসগিরি’ সিনেমাটাও ভালো করেছে, ‘শুট্যার’টাও ভালো করেছে। আমার রিপ্লেসমেন্টে। ইনফ্যাক্ট, আমি ছিলাম না কিন্তু আমার রিপ্লেসমেন্টে আমার বরের সঙ্গে ভালো প্রেম করেছে।” কিন্তু বুবলিকে নিয়ে টিপ্পনি কাটলেও অনুষ্ঠানে বুবলিকে ধন্যবাদ দিতেও এতটুকুও ভুল করেনি অপু বিশ্বাস। বলেন, “সে ‘বসগিরি’ ভালোমত করেছে। ‘শুট্যার’টা ভালোমত করেছে। আমার দশ-বারো মাসের গ্যাপে আমার স্বামীর জন্য (অতটা এক্সপ্লেন করতে চাই না) (বুবলি) আমার কাজগুলো ভালোমত করে গেছে।
‘বসগিরি’ থেকে ‘শুট্যারে’ অবধি।” শাকিব-অপু দম্পতির নিজেদের মধ্যে ভালো সর্ম্পক থাকার পরেও বুবলিকে কেন ফাঁদে ফেলা হলো? অনুষ্ঠানে এমন প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হয়েছে অপু বিশ্বাসকে। বলেন, “আমার খুবই খারাপ লাগছে। আমি একটিই বার্তা দিতে চাই। যেহেতু একটি ছেলের বিবাহিত জীবন, সাথে বাচ্চা হয়ে গিয়েছে। যদি ও শাকিবকে ভালোবেসেই ফেলে, হতেই পারে। শাকিবকে অনেকেই ভালোবাসতে পারে। তার মানে এই না সব জায়গায় শাকিব বিয়ে করে বেড়াবে। সে যদি ভালোবেসেই থাকে তা খুবই স্বাভাবিক।”
অন্যদিকে বতর্মানে নিজের প্রেম ও পুরো পৃথিবী জুড়েই নাকি সন্তান জয়। এমনটাই দাবি করলেন অপু বিশ্বাস। বলেন, “আমার প্রথম ছিলো ক্যামেরা। আর ছোটবেলা থেকে শাকিবকে শাকিব ভাই বলে ডাকতাম। এরপরে আমার সমস্ত ধ্যান, জ্ঞান, ভালোলাগা, ভালোবাসা, আমার পৃথিবী আমার ছেলে।” তবে নিজেদের কেরিয়ারের কারণে পড়াশুনা শেষ না করতে না পারার আক্ষেপ কিছুটা হলেও নিজেদের একমাত্র সন্তানের মাধ্যমে ঘুচাতে চান শাকিব-অপু দম্পতি। তাই ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করার পরিকল্পনার কথাও জানালেন অপু।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অপুর নতুন সিনেমা ‘রাজনীতি’, প্রয়াত নির্মাতা পি এ কাজরে চির বিদায় ও জয়ের আগামী সিনেমায় অপুর কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়গুলো অনুষ্ঠানে উঠে আসে। উপস্থাপনার পাশাপাশি অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা করেছেন শাহরিয়ার নাজিম জয়। আর অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেছেন আবদুস সাত্তার।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.