নির্বাচন প্রধান চারটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে সামনে রেখে ভোট দেবে ব্রিটিশরা


ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক, অভিবাসন, জাতীয় ক্ষেত্রে সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্রিটিশদের ভূমিকা পালনে সক্ষমতার বিষয়গুলি মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার ব্রিটিশরা নতুন সরকার গঠনের জন্য তাদের মতামত জানাবেন।
এবারে নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪৮ মিলিয়নের বেশি। গত বছর ব্রেক্সিট মেমোরেন্ডাম ভোটে এই সংখ্যা ছিল ৪৬ মিলিয়ন। ভোট কেন্দ্রে জাতীয় গড় উপস্থিতির হার ৬৪ শতাংশ। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স-এর গবেষণায় বলা হয়েছে ১৮-২৪ বছর বয়সী ভোটারের গড় উপস্থিতি ছিল ৩৬ ভাগ, ২৫-৩৪ বছরের ৫৮শতাংশ,৩৫-৪৪ বছরের ৭২ শতাংশ, ৪৫-৫৪ বছরের ৭৫ শতাংশ, ৫৫-৬৪ বছরের ৮১ এবং ৬৫+ বয়সীদের উপস্থিতি ছিল ৮৩ শতাংশ।

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন রেকর্ড সংখ্যক ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নিবেন।এতে নতুন ভোটারদের উপস্থিতি থাকবে বেশি।তাদের সংখ্যা ৩ মিলিয়নের বেশি। বরাবরের মতো এবারেও সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা কৌশলী জরিপের ফলাফলে যাই বলুক না কেন মূলধারার মেজরিটি ভোটাররা তাদের জাতীয়স্বার্থ রক্ষার বিষয়গুলি মাথায় রেখেই তারা ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন। আর মোট ভোটারের ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ হচ্ছে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ বা মূল ধারার ভোটার।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে ২০১০ সালের পূর্বে ভোটকেন্দ্রে শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল গড়ে ৫০ শতাংশের কম।২০১০ ও ২০১৫ সালের নির্বাচনে তাদের উপস্থিতির হার বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ শতাংশ। অপরদিকে যুক্তরাজ্যে অভিবাসী মাইনরিটি জাতিগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশের বেশি ভোটার ২০১০ সালের পূর্বে বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিকে ভোট দিয়েছে। তবে ২০১০ ও ২০১৫ সালে তা হ্রাস পেয়ে ৬৮ শতাংশের নিচে দাঁড়িয়েছে।

 আর্থ-সামাজিক গবেষণা কাউন্সিলের (ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ কাউন্সিল-ইএসআরসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মাইনরিটি ভোটের মাত্র ১৪-১৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি বা বর্তমান সরকারি দল। আর শ্বেতাঙ্গ ৩১ শতাংশ ভোট পায় লেবার পার্টি। এবারে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন এই সংখ্যা আরো হ্রাস পাবে।তবে নতুন ভোটারের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত যাবে লেবার পার্টির পক্ষে।

অতএব আখেরের ফলাফল কী হবে তা পূর্ব অনুমান করা খুবই জটিল সমীকরণ। ব্রেক্সিট ইস্যুকে পূঁজি করে নির্বাচন বৈতরণী পার হতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ। কিন্তু লেবার নেতা জেরেমি করবিনের জনবান্ধব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে মহলে বেশ সাড়া পড়েছে।কনজারভেটিভের ইশতেহারে তুলনামূলকভাবে অসচ্ছ্বল মানুষের জন্য ইতিবাচক কিছুই নেই বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। বরং প্রবীণদের সোশ্যাল কেয়ার বেনিফিট কর্তনের কথা বলে চরম বিপাকে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে।অবশ্য তিনি একাধিক ইস্যু সামনে এনে আবার ইউটার্ন করায় তার ইমেজে সংকটে পড়েছেন বলে মনে করেন সাধারণ ভোটাররা। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।

এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রায় ৩ মিলিয়ন নতুন ভোটার উৎসাহের সাথে ভোট কেন্দ্রে যাবেন এমনটাই মনে করা হচ্ছে।যাদের বেশির ভাগই তরুণ। সবমিলিয়ে অনুমান করা হচ্ছে এবার ভোটারের সংখ্যা হবে প্রায় ৪৮ মিলিয়নের বেশি।অবশ্য ইলেকটোরাল কমিশন ইত্তেফাককে জানিয়েছে তাদের কাছে আজকের দিন পর্যন্ত প্রকৃত ভোটারের কোনো ফিগার নেই।

সর্বশেষ জরিপের ফল অনুযায়ী কনজারভেটিভ ও লেবারের মধ্যে ব্যবধান আকস্মিকভাবে নিম্নমুখী হচ্ছে। অর্থাৎ লেবারের জনসমর্থন দিনকে দিন জ্যামিতিকহারে বাড়ছে। রীতি অনুযায়ী ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ব্রিটেনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লেবার নেতা জেরেমি করবিনের দুর্বলতার সুযোগে ক্ষমতা আরও নিরঙ্কুশ করতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এমন অভিযোগ নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের।

এমনও বলা হচ্ছিলো যে, লেবার দলে করবিনের অবস্থা এতটাই নাজুক, অন্তত একশ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবেন টেরিজা মে। কিন্তু বর্তমানে করবিনের জোরালো নির্বাচনী প্রচারণা আর জনকল্যাণমুখী ইশতেহার ঘোষণার পর এখন প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে অনেকটা চাপের মুখে রয়েছেন। গত সাত বছর ক্ষমতার বাইরে লেবার পার্টি এবং দলের ভিতরে কোন্দলে জর্জর। তাসত্ত্বেও দলটির প্রধান নেতা জেরেমি করবিন গতানুগতিক রাজনীতির বিকল্প তুলে ধরে বেকায়দায় ফেলেছেন ক্ষমতাসীনদের।

এদিকে তরুণদের আকৃষ্ট করতে লেবার পার্টি ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে শ্রেষ্ঠ উপায় হিসাবে বেছে নেয়ার পাশাপাশি জেরেমি করবিন এগিয়ে রয়েছেন টেলিভিশন বিতর্কে। অবশ্য ম্যানচেস্টারে বোমা হামলা ও লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে হামলার পর করবিনের ভোটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করলেও তা মূলত হয়নি। বরং মি.করবিন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে আসছেন এবং নিরাপত্তা অনুদান হ্রাস করে পুলিশ বাজেট কর্তনের বিষয়টি টেরিজা মেকে অনেকটা মূলধারার ভোটারদের কাছেও বিব্রত করেছে। এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে কনজারভেটিভ ২০০৫ সালে লন্ডনের পাতাল রেলে বোমা হামলার ঘটনাকে আজকের দিনপর্যন্ত সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
Share on Google Plus

About Admin

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.