তিউনিসিয়ার তরুণীরা সতীত্ব ফিরে পাওয়ার চেষ্টায়


তিউনিসিয়ায় ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে কসমেটিক সার্জারি। মুখ, নাক ও স্তনসহ দেহের বিভিন্ন অংশের পরিবর্তন আনতে এই ধরনের সার্জারির জনপ্রিয়তা অবশ্য অনেক দেশেই রয়েছে। তবে তিউনিসিয়ার তরুণীদের মধ্যে সতীত্ব পুনর্গঠনের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কসমেটিক সার্জারি’র ক্ষেত্রে তিউনিশিয়ার তরুণীদের মধ্যে এই বিষয়টি উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। সতীত্ব পুনর্গঠনের বিষয়টি হল কৃত্রিম সতিচ্ছেদ তৈরি করা। সামান্য সার্জারির মাধ্যমে যৌনাঙ্গকে এমন অবস্থায় আনা হয় যাতে মনে হয় তার আগে কোন যৌন অভিজ্ঞতাই হয়নি।

প্রতিবেদনে বিবিসি বলছে, তিউনিসিয়ার নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে বিয়ের পর অনেক পুরুষ সন্দেহ করেন যে তার নবপরিণীতা স্ত্রী আগেই সতীত্ব হারিয়েছেন। ফলে রাজধানী তিউনিসের ক্লিনিকগুলোতে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে এই সার্জারিগুলো হচ্ছে। এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তরুণীর সঙ্গে কথা হয় বিবিসি সংবাদদাতার।

ক্লিনিকে অপেক্ষমাণ কক্ষে বসা সেই তরুণী জানান, বিষয়টি কতটা গোপন থাকবে তা নিয়েই তিনি বেশি চিন্তিত। তরুণী বলেন, “এটা অনেকটা আত্মপ্রবঞ্চনার মতো ব্যাপার। আমি আসলেই উদ্বিগ্ন যে কোনো দিন হয়তো আমার স্বামীর সাথে আলাপচারিতার সময় ভুলবশত নিজের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করে ফেলতে পারি। বা আমার স্বামী হয়তো সন্দেহ করার জন্য কোনো সুত্র পেয়ে যাবেন।”

উদার পরিবারে জন্ম ২৮ বছর বয়সী ওই তরুণী তিউনিসিয়ার বাইরে বসবাস করেন। তবুও তার ভয়, হবু বর যদি তার যৌন অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারেন তবে হয়তো বিয়েই ভেঙ্গে দেবেন। ওই তরুণী জানান, “একজনের সাথে আমার প্রেম ছিলো এবং তখন আমি বুঝতেই পারিনি সমাজে এটা নিয়ে কেমন চাপ কাজ করে। এর পরিণতিই বা কি হতে পারে! সে কারণেই এখন আমার ভয় লাগছে। আমি যদি এগুলো আমার হবু বরকে বলি তাহলে আমি নিশ্চিত সে বিয়ে বাতিল করে দেবে।” যৌনাঙ্গ পুনর্গঠনের বিশেষ পদ্ধতি গ্রহণের জন্য চিকিৎসককে প্রায় চারশ’ ডলার দিতে হবে। এর মাধ্যমে সে কৃত্রিম সতীত্ব ফিরে পায়। অর্থাৎ বর তাকে দেখে সতী বা ভার্জিন বলেই মনে করেন। এই তরুণী তার পরিবার ও প্রেমিক তথা হবু বরকে না জানিয়েই গোপনে টাকা জমিয়ে এই ধরনের সার্জারি করছেন।

যদিও এ অপারেশনটি যিনি করবেন সেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একজন পুরুষ। সেই চিকিৎসককে অবশ্য প্রতি সপ্তাহেই এই ধরনের গড়ে দু’টি করে অপারেশন করতে হয়। এব্যাপারে তিনি জানান, “স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের অপারেশন করে থাকেন। এটা খুব ব্যতিক্রম কিছু নয়। যদিও অনেক চিকিৎসক এটা করতে চাননা। কিন্তু আমি করি, কারণ আমি তাদের সাথে একমত নই। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ধর্মীয় নীতিমালায় পরিপূর্ণ।

যেহেতু সবকিছু পুরুষ নিয়ন্ত্রিত তাই সবদিক থেকেই এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।” উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে নারী অধিকার সুরক্ষায় প্রশংসিত হয়েছে তিউনিসিয়া। তা সত্ত্বেও দেশটির অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা হয় ধর্ম ও প্রথা অনুসারে। এমনকি নারীর সতীত্বের ক্ষেত্রেও তা বাদ যায় না। সমাজের নিয়ম এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিয়ের আগে নারীকে যে কোন মূল্যে সতীত্ব রক্ষা করতে হয়। সমাজবিজ্ঞানী সামিয়া ইলৌমি অবশ্য মনে করেন, তিউনিসিয়ার সমাজ প্রতারণায় পরিপূর্ণ।

তিনি বলেন, “তিউনিসিয়ার সমাজ একটি মুক্ত সমাজ কিন্তু আমরা আসলে প্রতারক হয়ে যাচ্ছি। এখানে যেমন কিছু সামাজিক রীতি নীতি আছে যেগুলো পালনের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ আমরাই আবার দাবি করি যে এটি একটি আধুনিক সমাজ। আমরা ততটুকু আধুনিক হইনি যার প্রতিফলন নারীর যৌনতা ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে দেখা যায়।” দেশটির এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিশেম। যিনি আগামী বছরেই বিয়ে করতে চলেছেন।

বিবিসির সংবাদদাতা জানতে চান, তার হবু স্ত্রীর সতীত্ব আছে কি! জবাবে সে বলে, “আমার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের পর আমি যদি বুঝতে পারি যে সে ভার্জিন নয়, তাহলে কখনোই তাকে বিশ্বাস করতে পারব না। আমি এটাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবেই বিবেচনা করবো। আর আমি কিন্তু সতীত্ব পুনর্গঠনেও বিশ্বাস করিনা। আমার মনে হয়না এটা কার্যকর কিছু”। এমন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ক্লিনিকগুলোকে তাই নিরবেই নারীদের আসা যাওয়া চলছে। যাতে কারও দৃষ্টিতে পড়তে না হয়।
Share on Google Plus

About Admin

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.