পাকিস্তানের সোয়াতের কসাই বলে পরিচিত তালেবান নেতার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে দেশটির একটি সামরিক আদালত। তার নাম মুসলিম খান। ৩১ জন সামরিক ও বেসামরিক লোককে হত্যার দায়ে এই সাজা পেলেন তিনি ।
সোয়াতের কসাই ছাড়াও একই দণ্ড পেয়েছেন আরও আট জন। দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এই খবর নিশ্চিত করেছেন।
২০১৪ সালে পেশোয়ারে সেনা স্কুলে হত্যাযজ্ঞের পর এই আদালত গঠন করা হয়। আগামী সপ্তাহে এই আদালতের কার্যক্রম শেষ জবে।
সোয়াতের কসাই ছাড়া অন্য যারা মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন তারা ২০১৫ সালে করাচিতে শিয়া সম্প্রদায়কে বহনকারী বাসে হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
একই বছর সমাজকর্মী সাবিন মাহমুদ হত্যায়ও তাদের সম্পৃক্ততা ছিল।
৬২ বছর বয়সী মুসলিম খান ১৯৬০ দশকে পাকিস্তানে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের কর্মী হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন। কিন্তু ৯০ দশকে সোয়াতে তালেবানের কার্যক্রম শুরুর পর তার রাজনৈতিক আদর্শ পাল্টে যায়। তিনি ধীরে ধীরে এদের সঙ্গে জড়িয়ে যান। ২০০৭ সালে মুসলিম খান সোয়াতে তালেবানের মুখপাত্রে পরিণত হন।
২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি তালেবানের প্রকাশ্য কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সোয়াতের বিভিন্ন স্কুলে হামলা করে হত্যা, শিরোশ্ছেদ এবং ধ্বংসযজ্ঞের কারণে মুসলিম খান এবং সোয়াত তালেবানের প্রধান মোল্লা ফয়জুল্লাহ খানকে পরে সোয়াতের কসাই নামে ডাকা হতো।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে মুসলিম খানকে নিরপরাধ বেসামরিক মানুষ হত্যা এবং আইন প্রয়োগকারী ও সশস্ত্র বাহিনীর ওপর আক্রমণে জড়িত সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবেই বর্ণনা করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, এসব আক্রমণে ৩১ জন নিহতের পাশাপাশি আহত হন ৬৯ জন। এদের মধ্যে চার সেনাকে জবাই করা হয়।
মুসলিম খান দুই জন চীনা প্রকৌশলী এবং স্থানীয় একজনকে মুক্তিপণ আদায়ে অপহরণ করেছিলেন। তিনি বিচারিক আদালতে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করে নেন।
এরপর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
তিনি উর্দুর পাশাপাশি ইংরেজি, আরবি, পার্সি এবং পশতু ভাষায় পারদর্শী। তিনি মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা আরও বেশ কয়েকটি দেশ ঘুরেছেন।
২০০৯ সালে সোয়াত থেকে তালেবানকে হঠাতে সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে তিনি নিরাপত্তা হেফাজতে ছিলেন।
সামরিক আদালতের এই বিচার ছিল গোপন। আসামিরা কারাগারে অন্য বন্দিদের সঙ্গে মেশার সুযোগও পাননি।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আসামিদের বিচারে এই সামরিক আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ডন জানিয়েছে, গত দুই বছরে এই সামরিক আদালতে ২৭০টিরও বেশি মামলা পাঠানো হয়েছে।
এই আদালত এখন পর্যন্ত ১৬১ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। পাশাপাশি ১১৬ জন যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পেয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১২ জনের দণ্ড কার্যকর হয়েছে এখন পর্যন্ত।
আগামী জানুয়ারিতেই শেষ হচ্ছে সামরিক আদালতের মেয়াদ। তার আগে মুসলিম খান ও আট জনকে দেয়া সাজাই এই আদালতের শেষ রায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই আদালতের মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে কি না, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সামরিক বাহিনীর একটি অংশ এই আদালতের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে।
এই অংশটি মনে করে সরকার জঙ্গিবাদীদের মোকাবেলায় যথেষ্ট নয়।
তবে অধিকারকর্মীরা বলে আসছেন, আইনের শাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে এই আদালতের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.