শাসন ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত চেষ্টা করছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন।
দিনকয়েক আগেই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের অবৈধ বসতি নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব পাসে ভেটো দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
এবার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রূপরেখা তুলে ধরেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময়এক ভাষণে তিনি ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ক দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের একটি ফ্রেমওয়ার্ক ঘোষণা করেন।
ফিলিস্তিন ও ইসরাইল বিষয়ক পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে বিদায়ী ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে আসন্ন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ওবামা প্রশাসন চায় দুই দেশের মধ্যকার সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান হোক। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি বসতি স্থাপন বন্ধের পাশাপাশি ১৯৬৭ সালের প্রস্তাবিত সীমানা অনুযায়ী স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষেই ওবামা প্রশাসনের বর্তমান অবস্থান।
বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী তারা দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নীতির বিরোধী। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা এবং ইসরাইলে একজন কট্টরপন্থী রাষ্ট্রদূত নিয়োগের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প কার্যত আগ্রাসী জায়নবাদী প্রকল্পকেই সমর্থন দিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের আগেই মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে চায় ওবামা প্রশাসন।
পররাষ্ট্র দফতরে দেয়া ভাষণে জন কেরি মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান প্রক্রিয়ায় ওবামা প্রশাসনের আস্থার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
আট বছরের ওবামা প্রশাসনে ইসরাইলের বিষয়ে এত শক্ত অবস্থান এর আগে দেখা যায়নি। আগামী ১৫ জানুয়ারি প্যারিসে শুরু হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এক শীর্ষ সম্মেলনে সেই রূপরেখার পক্ষে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরাইলের মার্কিন সহকারী নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেন রোডস বলেন, ‘সংঘাত বন্ধের প্রশ্নে আমাদের কী করণীয়, আর বিষয়টিকে আমরা কীভাবে দেখি, এসব বিষয় উঠে আসবে কেরির বক্তব্যে।
২০১৬ সালে অনাকাঙ্খিতভাবে আমাদের মেয়াদ শেষেও শান্তি প্রক্রিয়ায় কেন তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি, এর ব্যাখ্যা উঠে আসবে কেরির বক্তব্যে।’
প্যারিস শীর্ষ সম্মেলনে কেরির অংশগ্রহণে শংকিত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। কেরির প্রস্তাব গ্রহণ হলে ওবামা প্রশাসন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ আসতে পারে।
আর তা সমন্বয় করা হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে। এর আগে ২৩ ডিসেম্বর ১৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বসতি নির্মাণ বন্ধে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
ওই প্রস্তাবে বলা হয়, ‘১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইল যে বসতি স্থাপন করে যাচ্ছে, তার কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’
নিরাপত্তা পরিষদের ১৪টি দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলে তা পাস হয়। ভোটদান থেকে বিরত থাকে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে অতীতে তারা ইসরাইলবিরোধী প্রস্তাবগুলোতে ভেটো দিত।
এ প্রস্তাব পাসের পর থেকে ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তিক্ততা চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। ইসরাইল ওই প্রস্তাবে ভেটো না দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করছে। এর জেরে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়া ১২ দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও সীমিত করেছে তেলআবিব।
বসতি স্থাপন ভোট বাতিল করল জেরুজালেম : পূর্ব জেরুজালেমে অবৈধ বসতি স্থাপন সংক্রান্ত এক ভোটাভুটি বাতিল করেছে সিটি কাউন্সিল। ওই প্রস্তাবে ৪৯২টি ইউনিটে বাড়ি, সমিতি অফিস ও সরকারি ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়েছিল। জেরুজালেম সিটি কাউন্সিলের একজন সদস্য এ কথা জানিয়েছেন।
বুধবার কাউন্সিল সদস্য হানান রুবিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অনুরোধের প্রেক্ষিতে ওই ভোটাভুটি বাতিল করা হয়েছে।
এ ঘটনা এমন সময় ঘটল যার কয়েকদিন আগে জাতিসংঘে ইসরাইলের বসতি স্থাপনবিরোধী একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে।
এছাড়া বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি স্বাধীন ফিলিস্তিনের রূপরেখা ঘোষণাপূর্বক দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের একটি প্রস্তাব পেশ করেছেন।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.