ছয় নারীকে ধর্ষণের ভিডিও ছড়ালেন ছাত্রলীগ নেতা!



তিনি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাম তাঁর আরিফ হোসেন হাওলাদার (২২)।  তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে এক গৃহবধূর ভিডিও ধারণ করেন প্রথমে।


পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে তাঁকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেন। সেটাও গোপনে ভিডিও করেন। সেই ভিডিও এখন এলাকার মানুষের হাতে হাতে। এভাবে ফাঁদে ফেলে ছয়জন নারীকে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে। গত ১৫ অক্টোবর থেকে ধর্ষণের ভিডিওগুলো গ্রামের মানুষের মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ে। জানতে চাইলে ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আরিফ এমন চরিত্রহীন, ভয়ংকর মানুষ, এটা আমাদের জানা ছিল না।

তিনি একাধিক নারীর সঙ্গে প্রতারণা করে ভিডিও ধারণ করার মাধ্যমে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওই এলাকায় যাই। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিই। আর আরিফ হোসেনকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, আরিফ স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র। ২০১৫ সালের জুন মাসে তাঁকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

লোকলজ্জার ভয়ে এসব নারী এ ব্যাপারে কোনো মামলা করেননি। তাঁদের মধ্যে একজন প্রবাসীর স্ত্রী। তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরেক গৃহবধূ গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। ঘটনার শিকার কলেজছাত্রীরা লোকলজ্জায় কলেজে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। ঘটনার শিকার এক গৃহবধূর বোন প্রথম আলোকে বলেন, আরিফ তাঁকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছেন। ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আতঙ্কে ও লোকলজ্জার ভয়ে এখনো মামলা করেননি। এক কলেজছাত্রী বলেন, ‘আরিফ আমাকে শেষ করে দিয়েছে। এখন সমাজে কীভাবে মুখ দেখাব? মরে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই।’ উপজেলা ছাত্রলীগের পদ থেকে বহিষ্কারের পর আরিফ হোসেন এলাকা থেকে পালিয়ে যান। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁদের বাড়ি গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। 

তিনি কোথায় আছেন, তা–ও পরিবারের সদস্যরা বলতে পারছেন না। এ বিষয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মুঠোফোনে আরিফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোর পরিচয় পেয়ে লাইন কেটে দেন। এরপর ফোন বন্ধ করে রাখেন। নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এ কাজ করতে পারেন না। আমি আরিফের বাবাকে নির্দেশ দিয়েছি তাঁকে হাজির করার জন্য। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের জানানো হয়েছে। তাঁকে পাওয়া গেলে সামাজিকভাবে বিচার করা হবে।’ 

 ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদি হাসান বলেন, ‘বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ না পাওয়া গেলে কীভাবে ব্যবস্থা নেব?’ জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ভেদরগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা যে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, তা বড় ধরনের সাইবার অপরাধ। পুলিশ ওই ছেলেকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। যেকোনো উপায়ে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.