একটি সড়ক দুর্ঘটনা চুরমার করে দিয়েছে তিনটি পরিবারের স্বপ্ন। স্তব্ধ হয়ে গেছে তাদের সবাই, নিশ্চল নিশ্চুপ হয়ে গেছে তাদের চারপাশ।
বিকেলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষার্থী ফৌজিয়া মোসলেম। তাকে বহনকারী ইজিবাইককে সামনাসামনি ধাক্কা দিয়ে সব কিছু ওলটপালট করে ফেলেছে একটি পিকআপ ভ্যান। ফৌজিয়ার নিজের পরিবার, তার হবু স্বামী ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
ফৌজিয়ার অকালমৃত্যুতে সোমবার কালো পতাকা উত্তোলন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়। তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ ঘাতক চালক কিংবা পিকআপ ভ্যানটিকে আটক করতে পারেনি।
নোবিপ্রবির ফার্মাসি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের মেধাবী শিক্ষার্থী ফৌজিয়া মোসলেম দুপুরে নোয়াখালী পৌরসভার পশ্চিম সাহাপুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে বের হন। সোনাপুর জিরো পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে সেখান থেকে সোনাপুর-সুবর্ণচর আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর দিয়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে চড়ে ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলেন তিনি। ইজিবাইকের চালকের পেছনের আসনে বসেছিলেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাকে বহনকারী ইজিবাইকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের উত্তরপাশে ঠক্কর এলাকায় পৌঁছার পর সুবর্ণচর-সোনাপুরগামী একটি পিকআপ ভ্যান ইজিবাইককে সামনে থেকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। ফৌজিয়া ছিটকে পড়ে মাথায় ও কপালে আঘাত পেয়ে অচেতন হয়ে যান। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নিহত শিক্ষার্থী মাথায় ও কপালে আঘাত পেয়ে মারা গেছেন।
এ সংবাদে তার পরিবার, হবু স্বামীর পরিবার ও ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে আসে। অকাল এ মৃত্যুকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার, সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ফৌজিয়ার বাবা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-ঠিকাদার মো. মোসলেম উদ্দিন কন্যাশোকে পাথর। এক বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে ফৌজিয়া ছিলেন সবার বড়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফৌজিয়ার বাবা বলেন, জীবনের সব স্বপ্নই ছিল এই মেয়েকে ঘিরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল ওর; কিন্তু সে স্বপ্ন ভেঙে গেল।
নোবিপ্রবির ভিসি ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান জানান, এ মৃত্যু একেবারেই অপ্রত্যাশিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হিসেবে ফৌজিয়া গত বৃহস্পতিবার তার হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফৌজিয়ার পরিবারের পাশে আছে।
মেধাবী, সুশ্রী ফৌজিয়া এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ এবং ফার্মেসি বিভাগের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। মাস্টার্সেও প্রথম স্থান অর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার স্বপ্ন ছিল তার। একই বিভাগের প্রভাষক মনির হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হওয়ার কথাও চূড়ান্ত ছিল।
গত রোববার রাত ৯টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে ফৌজিয়ার মরদেহ দাফন করা হয়। আত্মীয়স্বজন ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টর, ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আশপাশের লোকজন চোখের জলে চিরবিদায় দেন তাকে।
সুধারাম মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘাতক চালক ও পিকআপ ভ্যানটিকে আটক করতে পুলিশ রাত থেকেই কাজ শুরু করেছে।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.