মা ও ছেলেকে হত্যা



রাজধানীর কাকরাইলে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মা ও ছেলেকে একটি বাড়িতে ঢুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত ব্যক্তিরা হলেন শামসুন্নাহার (৪৬) ও তাঁর ছোট ছেলে সাজ্জাদুল করিম ওরফে শাওন (১৮)। শামসুন্নাহারের স্বামী আবদুল করিম ওই বাড়ির মালিক এবং তিনি একজন ব্যবসায়ী। পুলিশ গতকাল রাতেই করিমকে আটক করে রমনা থানায় নিয়ে যায়।


এ ঘটনায় বাড়ির দারোয়ান আবদুল নোমান ও বাসার গৃহকর্মী রাশিদা বেগমকেও পুলিশ আটক করেছে। পুলিশ সাজ্জাদুলের লাশের পাশ থেকে একটি রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করেছে। সাজ্জাদুল উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এ লেভেল পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পুলিশ বলেছে, শামসুন্নাহার ছাড়াও ব্যবসায়ী আবদুল করিমের আরেক স্ত্রী আছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহ ও অর্থসম্পদ নিয়ে বিরোধের জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। নিহত শামসুন্নাহার তাঁর স্বামী করিম ও ছোট ছেলে সাজ্জাদুলকে নিয়ে রাজমণি প্রেক্ষাগৃহের পশ্চিম দিকে ভিআইপি রোডের ‘মায়াকানন’ নামে নিজ বাড়ির পঞ্চম তলায় থাকতেন। তাঁদের অপর দুই ছেলের মধ্যে একজন যুক্তরাজ্যে, আরেকজন কানাডায় পড়াশোনা করছেন। 

ঘটনার সময় করিম পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে পেঁয়াজ ও আদার আড়তে ছিলেন। করিমের নয়াপল্টনে পলওয়েল মার্কেটে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা ছাড়াও আরও কয়েকটি ব্যবসা আছে। যে বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান খুন হয়েছেন, তার পাশে করিমের আরও দুটি ছয়তলা বাড়ি আছে। মায়াকানন ভবনের নিচতলায় তৈরি পোশাকের আনুষঙ্গিক পণ্যের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. স্বপন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় তিনি বাড়ির নিচতলায় ছিলেন। মাগরিবের নামাজের পর ওপর থেকে নেমে আসা এক ব্যক্তি দারোয়ানকে বলছিলেন, ‘ওপরে মারামারি হচ্ছে সেখানে যান।’ এরপর বাড়ির দারোয়ান ওপরে গিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘ম্যাডামকে মেরে ফেলেছে, আপনারা সবাই আসেন।’ এরপর তিনি ওপরে গিয়ে দেখেন পঞ্চম তলার সিঁড়িতে শাওন উপুড় হয়ে পড়ে আছেন। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন। বাসার ভেতরে ঢুকে দেখেন, শোয়ার ঘরে জায়নামাজে শামসুন্নাহারের নিথর দেহ পড়ে আছে। 

তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন। শোয়ার ঘরে ও বাসার সামনের সিঁড়িতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। স্বপন বলেন, দারোয়ান মুঠোফোনে করিমকে হত্যাকাণ্ডের খবর জানালে তিনি দ্রুত ছুটে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও র‍্যাবের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। গতকাল সন্ধ্যায় মায়াকাননে গিয়ে দেখা যায় উৎসুক লোকজন ও গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড়। ভবনে ঢোকার প্রধান ফটক তালা লাগানো। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জানান, ভেতরে ঢোকা যাবে না। শামসুন্নাহার হজ করে এসেছিলেন জানিয়ে পেছনের বাড়ির এক ভাড়াটে বলেন, ওই বাড়িতে অনেক নারী আসতেন। সন্ধ্যা সাতটার পর পুলিশ বাড়ির দারোয়ান নোমান ও গৃহকর্মী রাশিদা বেগমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় রাশিদা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, কিছুদিন আগে তিনি এই বাড়িতে খণ্ডকালীন কাজ নেন। 

গতকাল মাগরিবের নামাজের পর তিনি দরজায় টোকা দিলে গৃহকর্ত্রী দরজা খুলে দেন। তিনি রান্নাঘরে ঢোকার পর বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেওয়া হয়। রাশিদা বলেন, ‘আমি চিৎকার করে বলেছিলাম, আম্মা দরজা বন্ধ করলেন কেন, দরজা খোলেন। এ সময় “বাঁচাও” “বাঁচাও” বলে চিৎকার করছিল কেউ। কিছুক্ষণ পর বাড়ির দারোয়ান এসে ছিটকিনি খুলে দেন।’ তিনি বলেন, হত্যার কারণ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের অপরাধ শনাক্তকরণ দল ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছে। 

এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কৃষ্ণপদ প্রথম আলোকে বলেন, মায়াকানন ছাড়াও এই এলাকায় করিমের আরও দুটি বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ নিয়ে পারিবারিক কলহ থাকতে পারে। পুলিশের রমনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার নাবিদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহ ও অর্থসম্পদ নিয়ে বিরোধের জের ধরে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মা-ছেলের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.