টাঙ্গাইলের বাসাইলে সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান প্রসব করেছে। গত ১৬ নভেম্বর দুপুরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নবজাতকের জন্ম হয়। গ্রামের বৃদ্ধ সোনা মিয়ার যৌনলালসায় মেয়েটি এখন পরিচিতি পেয়েছে কিশোরীমাতা হিসাবে।
এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তোলপাড় চলছে পুরো এলাকায়। এ ঘটনায় প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ৬৫ বছরের আনিসুর রহমান ওরফে সোনা মিয়া মুন্সি’র বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হলেও এখনো সে ধরা ছোয়ার বাইরে। পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক বলে অভিযোগ করেছে ধর্ষিতার পরিবার।
জানা যায়, উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের নথখোলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা চার সন্তানের জনক সোনা মিয়া মুন্সি (৬৫) নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী (১৪)কে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ফলে ওই ছাত্রীটি গর্ভবতী হয়ে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছে। ধর্ষিত মেয়েটি পাশের এলাকা বাংড়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের। সে করটিয়া আবেদা খানম গালস হাইস্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী।
ধর্ষিতার পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোনা মিয়া মুন্সি ছাত্রীটির পরিবার নিরীহ হওয়ায় বিভিন্নভাবে টাকাপয়সা দিয়ে সহযোগিতা করে আসছিলেন। এই সূত্র ধরে তিনি মেয়েটির বাড়িতে যাতায়াত করতেন। গত ৯ মাস আগে মেয়েটির মা তাকে সোনা মিয়ার বাড়িতে এক হাজার টাকার জন্য পাঠায়। সোনা মিয়া মেয়েটিকে একা পেয়ে ঘরের ভিতর নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের বিষয়টি কাউকে না বলার হুমকি দেয় তিনি। মেরে ফেলার হুমকি দেয়ায় মেয়েটি বিষয়টি কাউকে জানায়নি। গত দুই মাস আগে মেয়েটির শারীরিক অবস্থা পরিবর্তন দেখে পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা ধারণা করে হয়তো মেয়েটির পেটে পাথর জাতীয় কিছু হয়েছে। এ ধারণা নিয়েই করটিয়ার একটি ক্লিনিকে মেয়েটিকে আল্ট্রাস্নোগ্রাম করালে ৭মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে ডাক্তার জানায়। পরে মেয়েটি তার পরিবারের কাছে ধর্ষণের বিবরণ দেন। পরে বিষয়টি অভিযুক্ত সোনা মিয়াকে জানালে তিনি মেয়েটির পেটের সন্তানটিকে নষ্ট করার জন্য এবং এক লাখ টাকা দিয়ে মিমাংসার কথা জানায়।
এ ঘটনায় ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে গত ২ অক্টোবর বাসাইল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সোনা মিয়াকে একমাত্র আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মেয়েটির মা বলেন, আমার এই একমাত্র মেয়েটি যখন পেটে তখন স্বামী অন্যজনকে বিয়ে করে আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আমি মেয়েটিকে নিয়ে ভাইয়ের বাড়িতে থাকি। সোনা মিয়া বিভিন্নভাবে টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করে আসছিলেন। মেয়েটিকে চাকরী নিয়ে দিবেন বলে বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। গত ৯ মাস আগে এক হাজার টাকা ধার আনার জন্য মেয়েটিকে তার বাড়িতে পাঠালে সোনা মিয়া জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
ধর্ষিতা মেয়েটি বলেন, সোনা মিয়া জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং বিষয়টি কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেয়। সে জন্যই আমি ওই সময় কাউকে জানাইনি। পরে গত ১৬ নভেম্বর ৯ মাসে আমার কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছে। আমি নিজেই একজন অল্প বয়সের মেয়ে। আমার পক্ষে মেয়েটিকে লালন-পালন করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমার স্বপ্ন ছিল চাকরি করার। সেই স্বপ্নই আজ আমাকে এখানে এনেছে। ওই কিশোরী এখন তার মেয়েটিকে সোনা মিয়ার পরিচয়েই বড় করতে চান। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন ওই কিশোরী।
স্কুলছাত্রী সন্তানের মা হয়েছে এমন খবরে নবজাতক শিশুটিকে দেখতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন ওই বাড়িতে এসে ভিড় করছেন। স্কুলছাত্রী সন্তান প্রসব করায় উভয়ের ভবিষ্যত নিয়ে সংসয় দেখা দিয়েছে। নবজাতক শিশুটির বাবার পরিচয় নিশ্চিত ও অভিযুক্ত সোনা মিয়ার কঠোর বিচার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, ওই ছাত্রীর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছি। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে ওই পরিবারকে কিছু আর্থিক সহায়তা দিতে পারবো।
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাসাইল থানার এসআই মোহাম্মদ নাছিম বলেন, গত ১৬ নভেম্বর ওই ছাত্রীটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। মা ও মেয়ের ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মামলা দায়েরর পর থেকে অভিযুক্ত সোনা মিয়া এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.