থাইল্যান্ডে রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের মৃত্যুর পর নতুন রাজা হলেন তার ছেলে ৬৪ বছর বয়স্ক ক্রাউন প্রিন্স মাহা ভাজিরালংকর্ন।
থাই পার্লামেন্ট ক্রাউন প্রিন্সকে নতুন রাজার দায়িত্ব নিতে আমন্ত্রণ জানানোর পর টিভিতে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভাজিরালংকর্ন সিংহাসনে আরোহণ করলেন। দায়িত্ব গ্রহণের জন্য বৃহস্পতিবার সকালেই তিনি জার্মানি থেকে দেশে ফেরেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সেনা কর্মকর্তা বলেন, হিজ মেজেস্ট্রি সকালে নিরাপদে দেশে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার রাজপুত্র বৌদ্ধ মতবাদ অনুযায়ী তার বাবা প্রয়াত রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের মৃত্যুর ৫০ দিনের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। এরপর সন্ধ্যায় থাই পার্লামেন্টের প্রধান পর্নপেচ উইচিতচলচাই-য়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সিংহাসনে অধিষ্ঠানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
টিভিতে এক বিবৃতিতে ভাজিরালংকর্ন বলেন, বাবার ইচ্ছা পূরণ করা এবং থাইবাসীর উপকারার্থে তিনি নতুন রাজার দায়িত্ব নিচ্ছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাই প্রধানমন্ত্রী এসময় ভাজিরালংকর্নকে স্বাগত জানিয়ে বলেন নতুন রাজা হবেন জাতির অন্তরাত্মা।
১৩ অক্টোবরে রাজা ভূমিবলের মৃত্যুর পর থেকেই থাই সিংহাসন ফাঁকা পড়ে আছে। তার মৃত্যুর পরপরই ভাজিরালংকর্নর পরবর্তী রাজা হওয়ার কথা থাকলেও বাবার মৃত্যুর শোক পালনের জন্য তিনি সিংহাসনে আরোহণের সময় পিছিয়ে দিয়েছিলেন।
রাজপুত্র দায়িত্ব নিতে দেরি করতে চাওয়ায় এতদিন অনানুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন রাজপরিবারের অভিভাবক পদে থাকা ৯৬ বছর বয়সী প্রেম। আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিয়ে ভাজিলাংকর্ন ২৩৪ বছরের পুরনো চকরি সাম্রাজ্যের দশম রাজা হলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি রাজা দশম রাম নামেই পরিচিত হবেন। ক্রাউন প্রিন্সের বাবা বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রাজত্ব পরিচালনাকারী প্রয়াত রাজা ভূমিবল থাইল্যান্ডের নাগরিকদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত এবং অভিভাবকতুল্য ছিলেন।
১৯৪৬ সালে ভাইয়ের মৃত্যুর পর মাত্র ১৮ বছর বয়সে থাইল্যান্ডের সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন ভূমিবল। এ বছরের জুনে তার সিংহাসনের আরোহনের ৭০তম বার্ষিকী পালন করা হয়। সিংহাসনে থাকার সাত দশকে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে বহু অস্থিরতা দেখেছেন রাজা। সেনা অভ্যুত্থানও হয়েছে, তবে রাজা বেশিরভাগ সময়েই রাজনীতির ঊর্ধ্বে ছিলেন।
থাইল্যান্ডের সংবিধান অনুযায়ী, রাজা রাজনীতির ঊর্ধ্বে হলেও দেশটির রাজনীতির অনেক সংকটময় পরিস্থিতিতে ত্রাতার ভূমিকায় দেখা গেছে ভূমিবলকে। ভাজিরালংকর্নের জনপ্রিয়তা তার বাবার মত নয়। ক্রাউন প্রিন্স থাকাকালীন তিনি থাইল্যান্ডের চেয়ে বিদেশে বেশি সময় কাটিয়েছেন। থাইল্যান্ডের আইন দেশটির রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের যে কোনও ধরনের হুমকি ও অপমান থেকে রক্ষা করে।
প্রাসাদের উত্তরাধিকার বিষয়ে প্রকাশ্যে যে কোনও ধরনের আলোচনা দেশটিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এদিকে, বছরব্যাপী প্রয়াত রাজার শোক পালনের কারণে পার্লামেন্ট নির্বাচন পিছাবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা। ২০১৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসেন জেনারেল প্রায়ুথ। এর পর ২০১৭ সালে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার তিনি জানান, প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই তার। “রাজা ভূমিবলের মৃত্যুর কারণে বছরব্যাপী যে শোক চলছে তাতে ২০১৭-র নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। যথাসময়েই তা অনুষ্ঠিত হবে, বলেন প্রায়ুথ।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.