পুরনো বই নতুন চোখে



‘‌বঙ্গ মহিলার জাপান যাত্রা ও অন্যান্য রচনা’এই গ্রন্থের লেখিকা, হরিপ্রভা তাকেদা। ‘‌বঙ্গ মহিলার জাপান যাত্রা’‌ নামে ১৯১৫ সালে তাঁর গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।


পরে সুদীর্ঘকাল পরে, মঞ্জুশ্রী সিংহের সম্পাদনায় হরিপ্রভার আরও দুটি প্রবন্ধ (‌‌‘‌জাপানে সন্তান পালন ও নারী শিক্ষা’‌এবং ‘‌যুদ্ধ জর্জরিত জাপানে’‌)‌‌ সংযোজিত হ‌য়ে এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। অখণ্ড বঙ্গদেশের ঢাকায় হরিপ্রভার জন্ম।

 পিতা শশিভূষণ মল্লিক ও মাতা নগেন্দ্রবালা। সে সয়ম ঢাকা শহরে ‘‌বুলবুল সোপ ফ্যাক্টরী’‌ নামে একটি সাবান প্রস্তুতকারক সংস্থা ছিল।

সেটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন, জাপানি রসায়নবিদ্‌ ওয়েমন তাকেদা। পারিবারিক পরিচয় সূত্রেই ১৯০৭ সালে দাঁদের বিবাহ হয়েছিল।

হরিপ্রভার বয়স তখন সতেরো। ১৯১২ সালের নভেম্বর, তিনি স্বামীর সঙ্গে জাপান যাত্রা করেন। জাপানি সংসারের বদু হিসেবেই তিনি গিয়েছিলেন।

জাপান–‌সংক্রান্ত বিবরণী রচনাতে তিনিই প্রথমা। হরিপ্রভার গ্রন্থে, জাহাজযোগে দীর্ঘ পথ যাত্রার বিবরণ আছে ডায়েরীর আকারে। হরিপ্রভা লিখেছেন–‌ ‘‌বিবাহের পর শ্বশুর শাশুড়ির আশির্বাদ লাভ করিতে ইচ্ছা হইত।

 তাঁহাদের নিকট পত্র লিখিয়া, যখন তাঁহাদের ফোটো–‌সহ আশির্বাদপূর্ণ একখানি পত্র পাইলাম ও তাঁহারা আমাদের দেখিবার জন্য আগ্রহান্বিত হইয়া পত্র লিখিলেন, আমার প্রাণ তখন আনন্দে ভরিয়া গেল।’ তাঁর রচনা থেকে জানা যায়, যাত্রার আগের দিন, হরিপ্রভার আত্মীয় পরিজনেরা দেখা করতে এসেছিলেন। ব্রহ্মমতে উপাসনা হয়েছিল।

 বিদায়ক্ষণে সকলেরই মন বিষণ্ণ। নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টীমারে কলকাতা ও সেখান থেকে ১৩ই ডিসেম্বর টোকিও পৌঁছে ছিলেন তাঁরা। হরিপ্রভা লিখেছেন, দীর্ঘ সমুদ্র যাত্রায় কখনও তিনি এস্রাজ বাজাতেন। কখনও সেলাই করতেন।

‘‌সমুদ্রপীড়া’‌ ‌তেও তাঁরা কাতর হয়েছিলেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, সূর্য্যস্তের মনোরম শোভা তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। স্টেশনে এসেছিলেন, তাঁর দুই দেবর। হরিপ্রভা জাপানী ভাষা জানতেন না। কিন্তু, শ্বশুর বাড়ির আন্তরিকতা ভাষা–‌না জানার জন্য কোন বাধা সৃষ্টি করেনি।

 জাপানিদের মস্তক অবনত ক‌রে শ্রদ্ধা জানানোর প্রথা, তাঁর খুব ভাল লেগেছিল। টোকিও পার্ক, মন্দির তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল। বাড়ি–‌ঘরদোর, গাছের পাতা ও নিশান দিয়ে সাজানো জাপানী নববর্ষ–‌উদ্‌যাপন প্রথা তাঁকে মুগ্ধ করেছিল।

সে উৎসবে যুক্ত হত বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়াকৌতুক ও সৈন্যদের কুচকাওয়াজ। ১২ এপ্রিল তাঁরা জাপান ছেড়ে ভারতে আসেন। শ্বশুর বাড়ির পরিজন অশ্রুজলে বিদায় দেন আর হরিপ্রভার মনে গাঁথা হ‌য়ে থাকে আজীবন এক মনোরম স্মৃতি।

এই নিঃসন্তান দম্পতি শেষ জীবনে থাকতেন হরিপ্রভার এক বোনপোর বাড়িতে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ওয়েসন মারা যান আর হরিপ্রভা মারা যান, গত শতাব্দীর সাতের দশকে। সুখপাঠ্য এই বইটি এক অজানা জগতের সন্ধান দেয়।
Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.