২৩ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভিড় করেছিলেন এক দল গণিতপ্রেমী তরুণ। উপলক্ষ অষ্টম জাতীয় স্নাতক গণিত অলিম্পিয়াড ২০১৬-এর মূলপর্ব।
বাংলাদেশ ম্যাথমেটিকাল সোসাইটির আয়োজনে এবং এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় উৎসবমুখর এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল ১২ নভেম্বর।
ছয়টি অঞ্চল ঘুরে সেরা শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বুয়েটে অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়। আয়োজকেরা জানালেন, এ বছর ছয়টি আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি (ঢাকা উত্তর), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ঢাকা দক্ষিণ), চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে।
প্রায় অর্ধশতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা ৬০০ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ছিল এই ছয়টি আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায়। প্রতি অঞ্চল থেকে সেরা ১০ জন, অর্থাৎ মোট ৬০ জন শিক্ষার্থী জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান।
শুক্রবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নির্বাচিত এই শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখরিত হয় বুয়েট প্রাঙ্গণ। সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেলুন উড়িয়ে, পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় দিনব্যাপী উৎসব। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বুয়েটের প্রকৌশল অনুষদের ডিন মো. আবু হাসান ভূঁইয়া।
এ ছাড়া বক্তব্য দেন জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আহ্বায়ক মুনিবুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ গণিত সমিতির সহসভাপতি অমূল্য চন্দ্র মণ্ডল, সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম, জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সম্পাদক অধ্যাপক মো. মনিরুল আলম সরকার এবং বুয়েটের গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম।
বক্তব্য পর্ব শেষে শোভাযাত্রার মাধ্যমে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। আঞ্চলিক পর্বে নিজেদের সেরা প্রমাণ করেই জাতীয় পর্বের ‘টিকিট’ পেয়েছিলেন ৬০ জন প্রতিযোগী। এবার ‘সেরাদের সেরা’ হতে তাঁদের দেড় ঘণ্টার একটি লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছিল।
সমাপনী পর্ব শুরু হয় বেলা আড়াইটায়। গণিতবিষয়ক প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে সেখানে প্রতিযোগীদের বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের তাৎক্ষণিক জবাব দেন দেশবরেণ্য গণিতবিদেরা। পুরস্কার বিতরণী পর্বে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম।
বিশিষ্ট গণিতজ্ঞ মুনিবুর রহমান চৌধুরী, অমূল্য চন্দ্র মণ্ডল, মো. শহীদুল ইসলাম, মো. মনিরুল আলম সরকার, এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি এ এম নুরুল আলমসহ বেশ কয়েকজন গণিতপ্রিয় মানুষ সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আবু হাসান ভূঁইয়া। বক্তারা এ ধরনের প্রতিযোগিতাকে সাধুবাদ জানান এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাতীয় পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন বুয়েটের তড়িৎকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী নাবিল ইবতেহাজ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় যথাক্রমে বুয়েটের একই বিভাগের মুনজেরিন রেজা এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আসলাম হোসেন।
চূড়ান্ত পর্বে শ্রেষ্ঠ ১০ বিজয়ীর প্রত্যেককে সনদ, ক্রেস্ট ছাড়াও এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে ১০ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সৌজন্যে প্রথম তিনজনকে ৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়।
সার্বিক আয়োজন নিয়ে কথা হলো অধ্যাপক মো. মুনিরুল আলম সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় গণিত নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি স্নাতক পর্যায়ে এসেও কাজ করে। সেই ভীতি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে গণিত ভীতিকে প্রীতিতে রূপান্তর করতে এবং চৌকস শিক্ষার্থীদের নিজেদের সামনে মেলে ধরার একটি প্ল্যাটফর্ম করে দিতেই আমাদের আয়োজন।’
তিনি জানালেন, ২০০৯ সাল থেকে শুরু হলেও প্রথমে এই অলিম্পিয়াড শুধু ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সারা দেশের স্নাতকপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতের উৎসাহ-উদ্দীপনা ছড়িয়ে দিতে চার বছর ধরে দেশব্যাপী অঞ্চলভেদে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই প্রতিযোগিতা।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.