বিভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবাই এককাতারে দাঁড়িয়ে নৌকা মার্কার পক্ষে লড়াই করবেন বলেই মনে করছেন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
আজ বুধবার নগর ভবনে নিজের শেষ কর্মদিবসে দায়িত্ব পালন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র। তিনি জানান, আগামীকাল নিজের মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। বিগত দিনের অভিজ্ঞতা, সততা আর মানুষকে সেবার কারণেই আগামী দিনে নারায়ণগঞ্জবাসী তাঁকে আবারও মেয়র পদে নির্বাচিত করে নগর ভবনে পাঠাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলার নেতাদের যে বৈঠক হয়েছে সেখানে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে? জবাবে আইভী বলেন, ‘আমাদের নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, সবাইকে একসঙ্গে মিলেমিশে নৌকার জন্য কাজ করার। যেহেতু দলীয় প্রতীক নৌকা, সেহেতু নৌকার জন্য কাজ করার জন্য নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।’ ‘আওয়ামী লীগের তৃণমূলে কোনো বিভেদ নাই। আমি গতবারও যখন নির্বঅচন করেছিলাম তখনো তৃণমূল নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে ছিল।
আশা করি, এবারও তারা আমার পাশে থাকবে। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ যে ঐক্যবদ্ধ কাল থেকে তার চিহ্ন আপনারা দেখতে পাবেন’, যোগ করেন আইভী। বুধবার বিকেল ৩টায় নিজের পদত্যাগপত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে নগর ভবনের কার্যালয় থেকে নিচে নেমে আসেন নারায়ণগঞ্জ সিটির প্রথম মেয়র। এ সময় সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা ছাড়াও গণমাধ্যমের কর্মীরা অপেক্ষায় ছিলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইভী জানান, আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্যই তিনি মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্র ই-মেইল ও হাতে হাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আইভী আরো জানান, বিগত পাঁচ বছরে তাঁর সময়ে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। এর মধ্যে জাইকা, এডিবি ও নিজস্ব তহবিল রয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, মার্কেট ও পার্কের উন্নয়ন হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন শেষে সেলিনা হায়াৎ আইভী নিজের ব্যবহার করা করপোরেশনের গাড়িটি নগর ভবনে রেখে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে হেঁটে নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আসেন।
আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর এভাবেই জনতার সঙ্গে হেঁটে নগর ভবনে গিয়ে প্রথম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতা ও পৌরসভার মেয়র আহমেদ আলী চুনকার কন্যা আইভী। আজ একইভাবেই দায়িত্ব ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ২৪ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই ও বাছাই করা হবে আগামী ২৬ ও ২৭ নভেম্বর। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় আগামী ৪ ডিসেম্বর। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় নির্বাচন।
এরই মধ্যে মধ্যে এই নির্বাচনে বিএনপি পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাত খুন মামলার প্রধান আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেনকে। এ ছাড়া আরো কয়েকটি দলের প্রার্থী মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল এ তিনটি পৌরসভা বিলুপ্ত করে ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। একই বছর ৩০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াৎ আইভি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী যিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে আইভি বিলুপ্ত হওয়া নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর মধ্যকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বহু পুরানো।
নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে এই শঙ্কায় গতকাল প্রধানমন্ত্রী গণভবনে নারায়ণগঞ্জের জেলা নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সবাই একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারও করেন বলে গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আজ বুধবার শেষ কর্মদিবসে নগর ভবন থেকে বেরিয়ে হেঁটে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.