রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় গ্যাস লাইটার তৈরির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুর মৃত্যু হয়। ওই শিশুর নাম আঁখি (১৩)।
সে রংপুরের মিঠাপুকুরের আশরাফুলের মেয়ে। অগ্নিকাণ্ডে তার শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ৪৬ জনের মধ্যে ২১ জনকে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পাঁচজন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। বাকিদের অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কারখানার মালিক কাউসার হামিদ গা-ঢাকা দেওয়ায় ব্যয়বহুল পোড়া রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্বজনরা। কারখানার মালিকসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত শ্রমিক মৃত্যুর অভিযোগ এনে আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসিনুল কাদির।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, দগ্ধদের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ১৭ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গেছে। এ কারণে তাদের সুপার স্পেশালিটি ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। কারখানার মালিকপক্ষের কেউ দগ্ধ ও আহতদের কোনো খোঁজখবর না নেওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই ওষুধ সরবরাহসহ রোগীদের খাবার ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে চিকিৎসা দিচ্ছে। অগ্নিদগ্ধ অনেক শিশুই যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তাদের একজন বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার জোরালি বাড়ির শিশুশ্রমিক মুক্তি। তার দেহের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মুক্তির মা রত্না বিলাপ করে বলছিলেন, অভাব ঘোচাতে মেয়েকে কারখানায় দিয়েছিলেন। সাভার থেকে ঢাকা মেডিকেলে যাওয়া-আসার ভাড়াটা পর্যন্ত তাঁর নেই। মেয়ে বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। মা হিসেবে সহ্য করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।
মেয়ের চিকিৎসা, সেরে ওঠা, মুদি দোকানের বাকি, ঘরভাড়া—এত সব কীভাবে সামলাবেন, সেই চিন্তায় কূলকিনারা পাচ্ছেন না রত্না। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ‘কালার ম্যাচ বিডি লিমিটেড’ নামে আশুলিয়ার গ্যাস লাইটার কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট পৌনে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.