নিম্নমানের ও ভেজাল প্যারাসিটামল ওষুধ সেবনে সারা দেশে ২৮ জন শিশুমৃত্যুর পরও ঘটনায় অভিযুক্ত রিড ফার্মার এমডিসহ পাঁচ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
এই প্যারাসিটামল পান করে শিশু মারাও গেছে। সে সময়কার ড্রাগ সুপার শফিকুল ইসলাম মামলা করার পর সেদিনই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। মিজানুর রহমান ওই বছরের ১২ অক্টোবর আত্মসমর্পণ করলে ঢাকার তৎকালীন জজ এ এন এম বশিরউল্লাহ তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অপর অভিযুক্ত শিউলি হাইকোর্টে জামিন পান।
খালাস পাওয়া পাঁচ আসামি হলেন রিড ফার্মার মালিক মিজানুর রহমান, তাঁর স্ত্রী পরিচালক শিউলি রহমান, পরিচালক আবদুল গনি, ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন মিজানুর ও শিউলি। পাঁচজনের মধ্যে বাকি তিনজন পলাতক রয়েছেন।
আজ সোমবার ঢাকার ড্রাগ আদালতের বিচারক এম আতোয়ার রহমান এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, নিয়মনীতি না মেনে আলামত জব্দ করায় আসামিদের সাজা দেওয়া যায়নি। সাত বছর আগে করা ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তদন্তে গাফেলতি ছিল। তাই আসামিদের খালাস দেওয়া হলো। একইসঙ্গে অভিযোগ প্রমাণে বাদীপক্ষের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আদালত।
২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে রিড ফার্মার বিষাক্ত প্যারাসিটামল সিরাপ পানে কিডনি নষ্ট হয়ে ২৮ শিশু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি তখন সারা দেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির অভিযোগ এনে ২০০৯ সালের ১০ আগস্ট ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, রিড ফার্মার তৈরি করা প্যারাসিটামলে বিষাক্ত উপাদান রয়েছে।
ঘটনার পর মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, রিড ফার্মার প্যারাসিটামলে বিষাক্ত উপাদানের কারণে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলেন, ওই প্যারাসিটামলে ডাই ইথানল গ্লাইকল পাওয়া যায়নি। তবে ওই ওষুধ ছিল নিম্নমানের। আলোচিত এ মামলার বিচারকালে বাদী শফিকুল ইসলাম, ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক এ আর খান, একই হাসপাতালের উপপরিচালক এইচ এস কে আলম, ঔষধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন, একই অধিদপ্তরের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবের সহকারী বিশ্লেষক মো. আবু বকর সিদ্দিক রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন।
আজ সেই মামলার বিটার শেষে মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, এ মামলায় বাদীপক্ষের অযোগ্যতা, অবহেলা ও অদক্ষতায় আসামিরা খালাস পেলেন। একই সাথে পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল কোম্পানি থেকে না করে শিশু হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করায় প্রকৃত ফল পাওয়া যায়নি।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.