নারায়ণগঞ্জে সাত খুন : মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ


নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল‌্যকর সাত খুনের দুটি মামলায় যুক্তি-তর্কের শুনানিতে আসামিদের রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে এ দুই মামলায় শেষ পর্যায়ের এই শুনানি চলছে। রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর অ‌্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা পৌনে ১টা পর্যন্ত আদালতের সামনে তার যুক্তি উপস্থাপন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ১৫ জন আসামির আইনজীবীরাও তাদের যুক্তি বিচারকের সামনে উপস্থাপন করেন এবং বেকসুর খালাস চান। বাকি ২০ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্কের জন্য মঙ্গলবার দিন রেখেছে আদালত।

দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হলে বিচারক রায়ের জন‌্য দিন ঠিক করে দেবেন। শুনানি শেষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে হত‌্যার পরিকল্পনা, অপহরণ, খুন ও লাশ গুমের সকল অভিযোগ আমরা আদালতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।

রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে। রশিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আবেদন করা হয়েছে। অন‌্যদিকে আসামিপক্ষের অন‌্যতম আইনজীবী অ‌্যাডভোকেট মো. সুলতানুজ্জামান বলেন, “আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ তা চাইতেই পারে। তবে আমরা আমাদের যুক্তি উপস্থাপন করব এবং আসামিদের বেকসুর খালাস চাইব।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ তার পাঁচ সহযোগীকে অপহরণ করা হয়। একই সময় একই স্থান থেকে অপর একটি গাড়িতে থাকা নারায়ণগঞ্জ আদালতের প্রবীণ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়ির চালককেও অপহরণ করা হয়।

ঘটনার তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর উপজেলা শান্তির চর এলাকার তীর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি এবং চন্দন সরকারের মেয়ের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে একই থানায় অন‌্য মামলাটি দায়ের করেন।

প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে প্রধান আসামি নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মণ্ডল। এই ঘটনায় র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশেনের তৎকালীন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনের পাঁচ সহযোগীসহ মোট ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘটনার ১৭ মাস পর মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তিনিসহ বর্তমানে এই মামলায় ২৩ আসামি কারাগারে রয়েছেন। পলাতক ১২ জনের মধ‌্যে আটজনই র‌্যাব সদস্য। পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, এ দুটি মামলায় এ পর্যন্ত ৩৪ কার্য দিবস আদালত বসেছে।

আসামিদের মধ‌্যে ২১ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১৬৪ জনের সাক্ষ‌্য শুনেছে আদালত; যাদের মধ‌্যে ৬০ জন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছে।
Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.