সাঁওতালদের ওপর ‘হামলার ঘটনা’ বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট


গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমি থেকে উচ্ছেদের সময় সাঁওতালদের ওপর ‘হামলার ঘটনা’ তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে একটি আবেদন হয়েছে।
হামলায় আহত সাঁওতাল দ্বিজেন টুডোর স্ত্রী অলিভিয়া হ্যামভ্রম এবং গণেশ মুরমোর স্ত্রী রুমিলা কিসকুর পক্ষে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সোমবার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন করেন। বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন‌্য আইনসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে এই রিট আবেদনে।

তিনি জানান, ওই জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ কার্যক্রম কোন ক্ষমতাবলে চালানো হয়েছে, তা জানতে চেয়ে গত ১৫ নভেম্বর প্রশাসনকে উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছিল। উচ্ছেদের সময় সাঁওতালদের উপর ‘হামলা’, তাদের বাড়িতে ‘লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ’ এবং ‘হত‌্যায়’ জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব‌্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল নোটিসে। তার জবাব না পেয়েই হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করা হয়েছে বলে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান।

তিনি বলেন, সাঁওতালদের উচ্ছেদের নামে ‘লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গুলি ও হত্যা’ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে রুল চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে। পাশাপাশি ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে। জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, চারজন সচিব, স্থানীয় সাংসদসহ ১২ জনকে এই রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। সেই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে তার দখল ফিরে পেতে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা। এরপর সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে বিরোধপূর্ণ চিনিকলের জন‌্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস শুরু করেন। গত ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে।

সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। একচালা ঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়ার পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি সমান করে দেয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। ওই ঘটনায় নিহত হন তিন সাঁওতাল, আহত হন অনেকে। সমতলের এই নৃগোষ্ঠীর উপর গুলিবর্ষণের ওই ঘটনায় সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওই জমি সাঁওতালদের ছিল না।

ভূমিদস্যুরা সাঁওতালদেরকে ‘ব্যবহার করেছে’। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সাঁওতালদের দিয়ে ‘দখল করিয়ে পরে নিজেদের দখলে নেওয়া’। অন‌্যদিকে সাঁওতাল পল্লীর বাসিন্দারা বলছেন, তারা ‘বাপ-দাদার জমিতে’ থাকার অধিকার চান। উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালরা একশ একর জমিতে ধান এবং প্রায় আটশ একর জমিতে মাস কালাই, সরিষা ও পাট চাষ করেছিলেন।

উচ্ছেদের সময় তাদের বাড়িঘরের পাশাপাশি মাঠের মাস কালাই, সরিষা ও পাট লুট করা হয়। ধান তখন লুট না হলেও উচ্ছেদের পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ পুরো জমি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেয়। এ বিষয়ে আরেকটি রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার সাঁওতালদের চাষের ধান তাদের কাটতে দিতে, অথবা ধান কেটে তা বুঝিয়ে দিতে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়।
Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.