যশোরে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র চালু হচ্ছে মঙ্গলবার


প্রথম দিনেই ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র যশোরে ৪ শতাধিক আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে আবেদন জমা দিয়েছেন ভিসা প্রার্থীরা।
কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ শোনা যায়নি কারো মুখে।মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল থেকে যশোরে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে। এদিন ভ্রমণ, মেডিকেল ও ব্যবসায়িক ভিসা প্রার্থীরা আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। সরেজমিনে জানা গেছে, ভিসা আবেদন গ্রহণের প্রথম দিন মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) বিভিন্ন ক্যাটাগরির চার শতাধিক আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম দিনে খুব সহজে আবেদনপত্র জমা দিতে পেরে সবাই বেশ খুশি।

সকালে নড়াইল থেকে এসে খুব সহজেই ভিসা আবেদনপত্র জামা দিয়েছেন দিগরাজ গোলদার। তিনি বলেন, ‘কোনো ঝামেলা ছাড়াই কাজ শেষ করেছি। খুব ভালো লাগছে। আশা করছি ২৭ ডিসেম্বর ভিসা হাতে পেয়ে যাবো। ইতোপূর্বে খুলনা সেন্টারে যাওয়ার জন্য ভোর ৫টায় বাড়ি থেকে রওনা হতে হতো, অথচ এখন ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ভিসা কেন্দ্রে পৌঁছে কাজ মিটিয়ে বাড়ি ফিরে অন্য কাজ করতে পারব।

এ কেন্দ্র চালু হওয়ায় তিনি ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। যশোর শহরের বকচর এলাকার বাসিন্দা সেলিনা খাতুন বলেন, ‘আগে একবার ই-টোকেন করে খুলনায় জমা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আবেদনপত্রে একটি কাগজে ত্রুটি থাকায় সংশোধন করে ওই দিন দিতে পারিনি। এতে ই-টোকেন খরচ, যাওয়া-আসা মিলে অন্তত ৪ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। অথচ এবার যশোরে বাড়ির কাছে জমা দিয়েছি। এজন্য খুব ভালো লাগছে।’ কারো কাগজে ত্রুটি থাকলেও তা সংশোধন করে দিনের দিন জমা দিতে পারবেন, এতে সবাই উপকৃত হবেন বলে মনে করেন তিনি।

ঝিনাইদহের বিষয়খালী এলাকার সঞ্জিত মণ্ডল বলেন, ‘আমার আর স্ত্রীর ভিসা আবেদন জমা দিয়েছি। কিন্তু বাচ্চার ই-টোকেন করিনি। এজন্য তার আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। বাচ্ছাদের ভিসার জন্য ই-টোকেন না থাকা ভালো।’ যশোরে ভিসা আবেদন গ্রহণ সেন্টার চালু করায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিয়ে শিশুদের জন্য ই-টোকেন ব্যবস্থা বাতিলের দাবি জানান তিনি।

যশোরের কেশবপুর উপজেলা শহরের বাসিন্দায় জীবন কুমার সরকার বলেন, মাস ছ’য়েক আগে খুব সকালে তিনি খুলনা ভারতীয় ভিসা সেন্টারে মেডিকেল ভিসার আবেদনপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে যেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদন জমা দিতে পারেন নি। এজন্য অনেক সময় ও অর্থ নষ্ট হয়েছে। এখন নিজের জেলা শহর যশোরে অল্প সময়ে এসে জমা দিতে পেরেছেন। ভিসা সেন্টার চালুর প্রথম দিন এসে নিজ শহরে জমা দেওয়ার ভালো লাগাটা একটু অন্যরকম।

তিনি আরও বলেন, ভারত সরকারের এ ধরনের উদ্যোগে দুই বাংলার বাংলা ভাষাভাষি মানুষের হৃদয়ের বন্ধন আরও অটুট হবে। তবে, অতিদ্রুত ই-টোকেন পদ্ধতি বাতিল করে মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি। খুলনা বিভাগের এটি দ্বিতীয় ভারতীয় ভিসা আবেদনপত্র গ্রহণ কেন্দ্র।

বিভাগের যশোর, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দারা এই সেন্টারে ভিসা আবেদন জমা দিতে পারবেন। যশোর শহরের মনিহার মোড় থেকে নড়াইল সড়কে যেতেই সাবেক বেগম কমিউনিটি সেন্টারটি এখন ভারতীয় ভিসা সেন্টার। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের সামনে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। যেখানে লেখা, ‘মেডিকেল ও ব্যবসার ক্ষেত্রে ই-টোকেন ছাড়াই ভিসা আবেদন জমা দেওয়া যাবে। পর্যটকের ক্ষেত্রে ই-টোকেন লাগবে। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া পরিচালিত এই কেন্দ্র থেকে পাসপোর্টে ডলার এনডোর্স, ট্রাভেল কার্ডও প্রদান করা হবে।

এদিকে, স্থানীয়রা জানান, উদ্বোধন উপলক্ষে প্রথম দুই দিন ই-টোকেন ছাড়া আবেদন গ্রহণ করা হবে এমন একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে যশোরাঞ্চলে। ওই গুজব শুনে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি আবেদন জমা দিতে সকালেই অফিসের সামনে এসে লাইনে দাঁড়ান। পরে অফিস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানতে পারেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। পরে তারা বাড়ি ফিরে যান।

স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার খুলনা শাখার প্রধান মানিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘যশোর কেন্দ্র চালুর ফলে খুলনা কেন্দ্রের ওপর চাপ কমবে। ৬৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের প্রার্থীদের ই-টোকেন ছাড়া ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন গ্রহণ করা হবে। অন্যান্য ভিসা আবেদন প্রচলিত নিয়মানুযায়ী গ্রহণ করা হবে। আর মেডিকেল ভিসার আবেদন সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত নেওয়া হবে।

অন্যান্য ক্যাটাগরির ভিসা আবেদন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জমা দিতে পারবেন প্রার্থীরা। ভিসা প্রসেসিং ফি মোবাইল ব্যাংকিং ইউ ক্যাশের মাধ্যমে দিতে হবে।
Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.