কড়াইল বস্তিতে আগুনে ৫০০ ঘর ও দোকান পুড়ে ছাই


রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে গতকাল অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে প্রায় ৫০০ ঘর ও দোকান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ অগিকাণ্ডে একজন আহত হলেও কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। আগুনে বস্তির সহস্রাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।


গতকাল বেলা পৌনে ৩টার দিকে বস্তির বউবাজারসংলগ্ন একটি লেপ-তোশকের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো বস্তিতে। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, বেলা পৌনে ৩টার দিকে ধোঁয়া দেখে এক মহিলা আগুন আগুন বলে চিৎকার করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন বস্তির কয়েকটি ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।

পরে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে প্রথমে সাতটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পর্যায়ক্রমে আরো সাতটি ইউনিট এসে বিকেল ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা জেলার সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান আকন্দ জানান, একটি লেপ-তোশকের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। তবে ৫০০’র মতো ঘর পুড়ে গেছে। এর মধ্যে অর্ধ শতাধিক দোকান রয়েছে। একজন আহত হওয়ার কথা শুনেছি। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বিকেল ৪টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। বারিধারা, কুর্মিটোলা, মোহাম্মদপুর ও ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতর ফুলবাড়িয়া থেকে ১৪টি ইউনিট গুলশান গুদারাঘাট থেকে ১৩টি পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরো বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক ঘটনাস্থলে ছুটে যান। স্থানীয় সূত্র জানায়, মহাখালীতে অবস্থিত টিঅ্যান্ডটি কলোনির পাশেই কড়াইল বস্তি। যেখানে আগুন লেগেছিল সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাড়ি প্রবেশ করার সুযোগ নেই।

১৪টি ইউনিট পাইপ টেনে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। আগুনের শিখা এতই তীব্র ছিল যে তা পুরো বস্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বস্তির বাসিন্দারা প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়ে রাস্তায় বের হন। তারা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন। সুমি নামে এক নারী বলেন, সকালে স্মার্টকার্ড আনার জন্য তিনি বনানী যান। সেখান থেকে খবর পান ঘরে আগুন লেগছে। ছুটে এসে দেখেন তার সব পুড়ে গেছে। ওই বস্তিতে তার ১০টি ঘর ছিল বলে জানান। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এই বস্তিতে প্রায়ই আগুন লাগে। তবে এখানে আল্লাহর রহমত আছে। বস্তির এত জনসংখ্যা ও ঘনবসতি থাকা সত্ত্বেও তেমন কোনো বড় ঘটনা ঘটেনি। এখানে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সবধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে।


তিনি বলেন, আগুন রাতে লাগলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারত। এখন ৪০০ থেকে ৫০০ ঘর ও দোকান পুড়েছে। রাতে লাগলে তিন হাজার থেকে চার হাজার ঘর পুড়ে যেত। এখন বস্তির আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার বাসিন্দা গৃহহীন হয়েছেন। মেয়র বলেন, আগুনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের তালিকা করে খাওয়া-দাওয়া ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া স্থানীয় দুই সংসদ সদস্যও ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীর ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মফিজুর রহমান মফিজ জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫০০ ঘর পুড়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে সহস্রাধিক মানুষ। বস্তি এলাকার একটি দোকান থেকে আগুনের উৎপত্তি হয় বলে স্থানীয়দের কাছে শুনেছেন তিনি। তবে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বা অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.