রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নতুন চারতলা একটি ভবনের তিনতলায় লিফটের পাশ থেকে দুটি বাঁশের বাতা বেরিয়ে আসার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পুরো ভবনে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে কি না বিষয়টি তদন্ত করবে এই কমিটি। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার এএফএম রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করতে মঙ্গলবার দুপুরে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এর প্রধান করা হয়েছে হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের প্রধান ডা. মোসাদ্দেক হোসেন।
কমিটিতে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম ও তাদের একজন ভবন বিশেষজ্ঞকে রাখা হয়েছে। তিনদিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় চরতলা ভবনটির তিনতলার লিফটের প্রবেশমুখে বাতার ওপর থেকে টাইলস উঠে গেলে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
এরপর বাঁশের ওই বাতার ওপর তড়িঘড়ি করে পত্রিকা বিছিয়ে প্লাস্টার করে দেয়া হয়। প্লাস্টারের পর জায়গাটি কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। তবে সোমবার সন্ধ্যায় লিফটে রোগী ওঠানোর সময় ট্রলির চাকায় প্লাস্টার উঠে গিয়ে আবারো বাঁশের বাতা বেরিয়ে আসে। এ সময় বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালে তোলপাড় শুরু হয়। ২০০৮ সালে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ২০১২ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক ভবনটির উদ্বোধন করেন। এরই মধ্যে ভবনটির বিভিন্ন স্থানের প্লাস্টার খসে পড়েছে।
মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার এএফএম রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান, মাসুম আল হাসান, আবু হেলাল আনসারী ও নাফিজ মাহমুদ ভবনটি পরিদর্শন করেন। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মার্ক বিল্ডার্সের পক্ষেই সাফাই গান।
এটি বড় ধরনের কোনো সমস্যা নয় মূল ভবনের সঙ্গে লিফট স্থাপনের সময় কিছুটা স্থান ফাঁকা থেকেছে। এই স্থানটিতে প্লাস্টার করে টাইলস বসানোর জন্য বাঁশের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না। পুরো ভবনে রডের পরিবর্তে বাঁশের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে-বিষয়টি এমনও নয়।’ রডের পরিবর্তে বাঁশের বাতা ব্যবহারের যৌক্তিকতা কতটুকু-জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সেখানে বাঁশের বাতার পরিবর্তে লোহার অ্যাংগেল বা টিনের প্লেট ব্যবহার করা যেত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, লিফটের যতটুকু অংশে বাঁশের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে প্রতিটি লিফট স্থাপনে ঠিকাদারের সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এতো কম পরিমাণ টাকা বাঁচাতেই যদি বাঁশের বাতা ব্যবহার করা হয়, তবে পুরো ভবন নির্মাণে ঠিক কতো জায়গায় বাঁশের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ‘রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি ফেসবুক পেজে বিষয়টি তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ ও তদন্তের দাবি জানিয়ে পেজটিতে লেখা হয়- ‘রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনের তৃতীয় তলায় লিফটের সামনে ভাঙা অংশে দেখা যায়, সেখানে লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ওই ভবনে অবস্থানরত কয়েকশ রোগীর প্রাণহানি ঘটতে পারে। যারা এ কাজ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর আবেদন জানাচ্ছি।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মার্ক বিল্ডার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। রাজশাহী গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলামও প্রতিষ্ঠানটির কারও মুঠোফোন নম্বর দিতে পারেননি।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.