মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে গত ২২ দিনে ১ হাজার ১৫৬ জনের কারাদণ্ড হয়েছে। গত ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান গতকাল বুধবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে।
অভিযান চলার সময় ২৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। মা ইলিশ ধরা, বাজারজাত, পরিবহনের ক্ষেত্রে গত ১২ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। গতকাল রাত ১২টার পর থেকেই জেলেরা ইলিশ মাছ ধরতে পারছেন। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরার বিষয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা বরাবরই ছিল। তবে ২০১১ সালে মৎস্য সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে প্রধান প্রজনন মৌসুম নির্দিষ্ট করা হয় এবং নিষেধাজ্ঞাও কড়াকড়িভাবে বলবৎ করা হয়।
আশ্বিনের প্রথম উদিত চাঁদকে প্রধান প্রজনন মৌসুম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ সময় ইলিশ ধরা ও বিক্রি বন্ধ করা হয়। কেননা এ সময় মা ইলিশের প্রজননের সময়। ইলিশ ধরা জেলেদের জন্য তাই সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়ার কর্মসূচিও নেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে কার্যকর এবং জেলেদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়ার পর দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি কর্মসূচির ফলেই এই উৎপাদন বেড়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০২-০৩ অর্থবছরে দেশে দুই লাখ মেট্রিক টনের কম ইলিশ উৎপাদিত হতো। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। গত মৌসুমে ইলিশ ধরা পড়ে ৩ লাখ ৮৭ হাজার টন। এ বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে ব্যাপক হারে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করে। মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছর ইলিশ ধরার পরিমাণ পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা ধারণা করছি।’ শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘একটি মা ইলিশ গড়ে ২০ থেকে ২২ লাখ ডিম ছাড়ে।
সব মা ইলিশ রক্ষা করা গেলে দেশ মাছে ভরে যাবে।’ মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্র জানিয়েছে, ইলিশ রক্ষায় গত ২২ দিনে ২ হাজার ২৭১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসে। অভিযান পরিচালিত হয় ১১ হাজার ৫৩১টি। মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ ব্যবস্থাপনা শাখার সহকারী পরিচালক মাসুদ আরা মমি বলেন, এসব অভিযানে ৩৩ দশমিক ৯৪ টন ইলিশ আটক করা হয়। অভিযানে প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ মিটার দৈর্ঘ্যের কারেন্ট জাল আটক করা হয়। অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অভিযানে উপকূলীয় এলাকার তুলনায় বৃহত্তর ঢাকার নদী অঞ্চলে এবার বেশি জেলের কারাদণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে রাজবাড়ী জেলায় সর্বোচ্চ ১৬০ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
শরীয়তপুরে ১৫৫, মানিকগঞ্জে ১৫২ জন। ঢাকা অঞ্চলে বেশি সংখ্যায় কারাদণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে মাসুদ আরা মমি বলেন, এ বছর এসব জেলার নদী এলাকায় অপেক্ষাকৃত বেশি ইলিশ ধরা পড়েছিল মৌসুমে। তাই জেলেরা অভিযানের সময়ও তৎপর হয়েছিলেন মাছ ধরতে। ১৪টি জেলার ৭৬টি উপজেলার সাড়ে তিন লাখ পরিবারের জন্য বিনা মূল্যে ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয় সরকার।
মোট বরাদ্দ হয় ৭ হাজার ১৩৪ মেট্রিক টন চাল। আর অভিযান পরিচালনার জন্য চার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। আইন অনুযায়ী, ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে কেউ মাছ ধরলে তাঁকে ন্যূনতম এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘সাড়ে তিন লাখ জেলের মধ্যে ১ হাজার ১০০ জেলের কারাদণ্ডের ঘটনা বড় কিছু নয়।
আমরা সব সময় এ অভিযানে সহযোগিতা করেছি।’ আনোয়ার হোসেন বলেন, যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁরা খুবই দরিদ্র। সরকার যে ২০ কেজি চাল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তা এখনো বিতরণ শুরু হয়নি। যদি এসব দরিদ্র জেলে আগে থেকে চাল পেতেন, তবে হয়তো তাঁরাও নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরতে যেতেন না। এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও পশুসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, চাল আগে থেকে দেওয়া হলে ভালো হতো এখন তা বিতরণ শুরু হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জেলেদের দণ্ড দেওয়াটা আমাদের জন্য কষ্টকর। তবে এটুকু কঠোর না হলে এই মূল্যবান সম্পদ আমরা রক্ষা করতে পারব না।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.