সবাই লেখে হাতে কিন্তু ফরিদপুরের নগরকান্দার জসীম লেখে পা দিয়ে,জন্মগত ভাবে তার হাত দুটি নেই। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া জুনিয়ার স্কুল সার্টিফিকেট (জে এস সি) পরীক্ষায় উপজেলার মনোহরপুর দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে তালমা নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র জসিমকে পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিতে দেখা গেছে ।
উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের হানিফ মাতুব্বর ও তছিরন বেগম দম্পত্তির বড় ছেলে জসীম মাতুব্বর। তারা চার ভাই এক বোন। ছোট ভাই রশিদ সপ্তম শ্রেণী, লিমন ৩য় শেণী , আবুল খায়ের কওমী মাদ্রাসায় ও বড় বোন পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে স্থানীয় মহিলা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, জসীম হতদরিদ্রপরিবারের ছেলে, সম্পত্তি বলতে শুধু বাড়ীটি আছে। বাবা হানিফ পরের জমিতে দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালায়। মা তছিরন বেগম বলেন, ২০০১ সালের ১৩ মার্চ জসীম বিকলাঙ্গ অবস্থায় জন্ম হয়।
আমরা স্বামী –স্ত্রী দু’জনেই লেখা পড়া জানিনা। অভাব অনটনের মধ্যে সন্তানদের লেখা পড়া শেখাচ্ছি। তিনি জানান, জসীম সব কাজ নিজেই করতে পারে। ফুটবল খেলতে পারে। মুঠোফোন রিসিভ ও কল করতে পারে। কায়দা করে মাছ শিকার করতে পারে। কদমতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান এবিসি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট এমএলকে জানান, ২০০৮ সালে জসীম এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তখন থেকেই ওর পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই। দেখলাম সে পড়ায় স্মরণশক্তি প্রখর। তাই ভাবলাম পড়ায় ভালো হলে কেন লিখতে পারবেনা। তাই ওর ডান পায়ের দাই আঙ্গুলের ফাঁকে চক আটকিয়ে দিয়ে লেখার তালিম দেই।
কয়েকদিনের মধ্যেই ও সুন্দর লিখতে শিখে যায়। জসীম এবিসি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট এমএলকে জানায়, বড় হয়ে সে শিক্ষক হতে চায়। এলাকার ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে সহায়তা করবে। ফলে তারা নিজেরাই জীবিকা অর্জন করতে পারবে। কেউ তাদের ঠকাতে পারবেনা। জসীমের বাবা হানিফ মাতুব্বর বলেন, আমি গরীব মানুষ। আমার একটাই আশা জসীম লেখাপড়া করে বড় হলে সরকার যেন একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করেন।তালমা নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, জসীম লেখা পড়ায় অত্যান্ত ভালো। ওর লেখা পড়ার প্রতি আমাদের বিশেষ নজর রাখছি।
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবদুল আজিজ বলেন, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বেগম উম্মে সালমা তানজিয়া মহোদয়সহ আমি ওর পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। জসীমের লেখা পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে ইতি মধ্যে জমীমের বাবা ও মায়ের নামে কিছু জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। ওর স্কুলে আসা যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একটি ভ্যান গাড়ী অনুদান প্রদান করেছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া এবিসি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট এমএলকে , জসীমের পড়া-লেখার প্রতি প্রবল অনুরাগ দেখে প্রশাসনের পক্ষ হতে দ্রুত একটি ভ্যান গাড়ীর ব্যবস্থা করা হয়েছে । এছাড়াও প্রয়োজনবোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জসীমকে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে ।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.